ইউরোপ-আমেরিকায় কমছে সংক্রমণ, বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায়, বাড়ছে মৃত্যু

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন করোনার সংক্রমণ কমে আসছে তখনই দ্রুত করোনা ছড়াচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। জুনের শুরু থেকে বাংলাদেশ-ভারত এবং পাকিস্তানে সব কিছু খুলে দেয়াতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। ফলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষ এবং মৃত্যু। পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনটি দেশের সরকারকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা সংক্রমণে এখনও বিশ্বের এক নম্বর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। দেশটিতে ১১ জুন একদিনে নতুন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৩০০ জন। গত ২৪ এপ্রিল দেশটিতে সর্বোচ্চ এক দিনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭২ জন। আশার কথা হচ্ছে ১১ জুন দেশটির সব থেকে ভয়াবহ অবস্থায় পড়া নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ছিল মৃত্যুশূন্য। ইতালির যে ভয়াবহতা বিশ্ববাসী দেখেছে সেই ইতালিতে ২১ এপ্রিল সর্বোচ্চ একদিনে আক্রান্ত হয়েছিল ছয় হাজার ৫৫৭ জন। আর ১১ জুন এসে দেশটিতে সংক্রমণের পরিমাণ কমে একদিনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৭৯ জন। পরিস্থিতি ভাল হওয়াতে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী ইতালি থেকে চলে এসেছিলেন তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট ১৮৭ জনকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকাতে করোনার ভয়াবহতা যখন কমে আসছে ঠিক তখন সংক্রমণ বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ইউরোপ এবং আমেরিকার অন্য দেশে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। যদিও এরমধ্যে ব্যতিক্রম ব্রাজিল।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে সংবাদ সম্মেলন সেখানে বলা হয়েছে একদিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪৭১ জনের মধ্যে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। আর এদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। পরিসংখ্যান বলছে গত সাত দিনের প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার জনের বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। গত ৫ জুন দেশে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার ৩৯১ জন এরপর ৬ জুন তা বেড়ে হয় ৬৩ হাজার ২৬ জন, পর্যায়ক্রমে ৭ জুন ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন, ৮ জুন ৬৮ হাজার ৫০৪ জন, ৯ জুন ৭১ হাজার ৬৭৫ জন, ১০ জুন ৭৪ হাজার ৮৬৫, ১১ জুন ৭৮ হাজার ৫২ জন এবং ১২ জুন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৫২৩ জনে। অর্থাৎ গত আট দিনে রোগী বেড়েছে ২১ হাজার ১৩২ জন।
সরকারের উপর মহল থেকে সাধারণ ছুটি আর বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকাকে জোনে চিহ্নিত করে লকডাউন করার কথা বলা হচ্ছে। সেই কাজ করতে গিয়ে জোনিং করতে সময় নেয়া হচ্ছে এতে করে রোগের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে চলেছে। তবে এরমধ্যে একটি এলাকার আংশিক এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছে। যেখানে মাত্র ৩৫ জন করোনা রোগী রয়েছে। সেখানের বাসিন্দার সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। কিন্তু অধিক করোনা আক্রান্ত এলাকা রয়েছে। যেখানে সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে সঙ্কট আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বলেছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কিছু একটা করা উচিত। তবে কি করা উচিত তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। তিনি বলেছেন, তাদের পরামর্শক কমিটি রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ন্ত্রণের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। যদিও পরামর্শক কমিটির কথা খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যায় এখনও ১৯ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এখন ৮১ হাজার ৫২৩ জনের সংক্রমণ নিয়ে চীনের ঠিক নিচের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চীন ৮৩ হাজার ৬৪ জনের সংক্রমণ নিয়ে রয়েছে তালিকার ১৮ নম্বরে। যেহেতু চীনে নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না তাই দেশের অবস্থান পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অন্যদিকে ভারতেও দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণের হার। দেশটিতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সব থেকে ভয়ের বিষয় হচ্ছে ভারতে করোনা মৃত্যুহার পাঁচ ভাগ। অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য প্রদান করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, ভারতে ১১ জুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৮৮ জন, ১০ জুন ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ১৫৫, ৯ জুন ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮০ জন, ৮ জুন ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৮ জন, ৭ জুন ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৬ জন, ৬ জুন ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬২২ জন এবং ৫ জুন ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৪ জন।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবর বলছে দেশটির পশ্চিমবঙ্গে ফোচকাওলাও বিক্রি শুরু করেছে। অর্থাৎ অতিমাত্রায় সংক্রমিত এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা দরকার সেখান থেকে অনেকটা সরে এসেছে ভারত। এরপর থেকেই সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় এখন চার নম্বরে উঠে এসেছে ভারতের নাম। দেশটি ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যকেও পেছনে ফেলেছে আক্রান্তের সংখ্যায়।
অন্যদিকে পাকিস্তানেও আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাকিস্তানে এক লাখ ২৫ হাজার ৯৩৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। গত ৫ জুন যেখানে পাকিস্তানে রোগী ছিল ৮৯ হাজার ২৪৯ জন সেখানে ১১ জুন এসে রোগী বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৬ জন। দেশটিকে ১১ জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৪৬৩ জন মারা গেছেন। যা মোট আক্রান্তের ছয় ভাগ।