সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে গড়ে উঠা দেশের অন্যতম বৃহৎ হাই-টেক পার্ক “সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি”র মৌলিক অবকাঠামোগত কাজ শেষ পর্যায়ে। ১৬৭ একর জমির উপর গড়ে উঠা সিলেট হাই-টেক পার্ক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেন এই হাই-টেক পার্কে অন্তত ৫০ হাজার দক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। কর্তৃপক্ষ দেশী এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের এই ইলেক্ট্রনিক্স সিটিতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহবান জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল ২০১৯ সকাল ১১:০০ ঘটিকায়) চেম্বার কনফারেন্স হলে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ এর সভাপতিত্বে সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন সিলেট হাই-টেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া।
সেমিনারে প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম ও কল্যাণ কুমার সরকার।
প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার সরওয়ার তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সরাসরি নির্দেশনায় প্রকল্পটি দ্রুত গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে বিনিয়োগের জন্য প্রকল্পটি বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, ২২ ফুট গভীর ১৬৭ একর প্রকল্পের ভূমিটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সাইট অফিস, প্রশাসনিক ভবন, দৃষ্টিনন্দন আইসিটি বিজনেস সেন্টার, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কাজ চলছে। নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ এবং বিগত ৫০ বছরের অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। স্থাপন করা হচ্ছে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন এবং গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, আগামী মাসখানেক পরেই গাড়ি নিয়ে প্রকল্প এলাকায় যাওয়া যাবে। প্রকল্পের জন্য ৩৬ লক্ষ ঘনফুট মাটির মধ্যে ৩১ লক্ষ ঘনফুট মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প এলাকাটি সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে ১২ কি.মি. এবং রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২২ কি.মি. দূরে।
কর্মশালায় জানানো হয় ৪০ বছর মেয়াদী প্লট লীজ দেওয়া হবে। প্রতি স্কয়ার মিটার ভূমির ভাড়া হবে ১.৫ ডলার প্রতি বছর। এছাড়া ৩১ হাজার স্কয়ার মিটার স্পেস বিনিয়োগকারীদের ভাড়া দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীরা ট্যাক্স হলিডেসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবেন। কোন ছাড়পত্রের জন্য কোন দপ্তরে দৌড়াতে হবে না। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৪৮টি সেবা প্রদান করা হবে। যতরকম সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন হবে তা সরকারই করে দেবে, তবে কোম্পানী গঠনের পর তা অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। তিনি জানান, আইসিটি হচ্ছে বিশ্বের শেষ রেভোলিউশন। দেশে এবং বিদেশে সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটিতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সিলেট চেম্বারকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি আহবান জানান।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন সিরাজুল ইসলাম বাদশা, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট চেম্বারের পরিচালক জিয়াউল হক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শরফুদ্দিন, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলীমুল এহছান চৌধুরী, ট্রেড সিলেটের সিইও মোঃ ফখরুজ্জামান, সাংবাদিক মোঃ ফয়ছল আলম, নূর আহমদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম জীবন কৃষ্ণ রায়, সোনালী ব্যাংকের জিএম মোঃ আশরাফউল্লাহ, জনতা ব্যাংকের ডিজিএম সন্দীপ কুমার রায়, পরিচালক আব্দুর রহমান, চন্দন সাহা, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মুজিবুর রহমান মিন্টু, মাউন্ট এডোরা হসপিটালের এমডি প্রফেসর ড. কে. এম. আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সিলেট অফিসের প্রধান মধু সূদন চন্দ, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি দিগেন সিংহ, ওকাস সভাপতি খালেদ আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক কামকামুর রাজ্জাক রুনু, সিলেট চেম্বারের সদস্যবৃন্দ, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বিনিয়োগকারীবৃন্দ। বিজ্ঞপ্তি