কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা দেশে ফেরার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। তারা যাতে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরতে পারেন। ইতোমধ্যে ইউরোপ আমেরিকার কয়েক হাজার যাত্রী নিজেরাই উড়োজাহাজ চার্টার্ড করেন। ঢাকার অনুমতি পেলে তারা দেশে আসতে পারেন। সেই অনুমতি না মেলার কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশী দেশে ফিরতে পারছেন না।
এই যাত্রীরা কেউ ব্যবসায়ী কাজে, কেউ চিকিৎসার জন্য আবার কেউ বেড়াতে গিয়েছিলেন। করোনার মহামারীতে হঠাৎ করেই তারা ‘লকডাউনের’ শিকার হন। দিনের পর দিন তারা বিভিন্ন দেশে আটকে আছেন। এখন তাদের অনেকের হাতেই কোন টাকা পয়সা নেই। ফলে তাদের দেশে ফেরা জরুরী। ইউরোপ আমেরিকা থেকে কয়েক যাত্রী টেলিফোনে এ তথ্য জানিয়েছেন। করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। তবে ‘চার্টার্ড’ করলে এয়ারলাইন্সগুলো উড়োজাহাজ ভাড়া দিচ্ছে। কারণ চার্টার্ড করলে নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া তারা আদায় করতে পারছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ভারত, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, কুয়েত, মাল্লীপ থেকে চার্টার্ড (বিশেষ ফ্লাইটে) প্লেনে কয়েক হাজার বাংলাদেশী ফিরে এসেছেন। ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে চার্টার্ড প্লেনে দেশে ফেরার নজির রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোন উড়োজাহাজ এখনও ঢাকায় আসেনি। বর্তমানে ইউরোপও বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক বাংলাদেশীর বিদেশে টিকে থাকাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় চার্টার্ড করা প্লেনও বারবার তারিখ বদল করছে। অনেক এয়ারলাইন্স বেশি টাকা নেয়ার জন্য এ কাজ করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছে। এয়ারলাইন্সগুলোর শর্ত ছিল করোনা মুক্ত সনদপত্র থাকতে হবে তবেই দেশে ফেরার বিষয়ে তারা সিট দেবে। এ রকম শত শত যাত্রী সনদপত্র দিয়েই টিকেট কিনলে এখন নানা অজুহাতে বারবার তারিখ পরিবর্তন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন সহযোগিতা না থাকার কারণে এয়ারলাইন্স অনেক সময় বাংলাদেশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঘাড়েও দোষ চাপাচ্ছে। ফলে আটকে পড়াদের দেশে ফেরার বিষয়টি চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চালু না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এভাবে আটকে থাকতে হবে। আমেরিকা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, আমি চিকিৎসা করতে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে করোনার কারণে আটকা পড়েছি। শুধু আমি না আমার মতো আরও অনেক মানুষ আটকা পড়েছেন। তাদের এখানে থাকা মানে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন দেশে আটকা পড়াদের বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমেরিকা থেকেও এ ধরনের ব্যবস্থা করতে পারে।
কামরুল ইসলাম চৌধুরী মার্চের শুরুর দিকে ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন সুস্থ জীবন যাপন করছেন। তিনি এখন দেশে ফেরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সনদ দেখিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের টিকেট কাটেন গত মাসে। তার ফ্লাইট ৫ বার সিডিউল পরিবর্তন করেছে। এয়ারলাইন্স এখন বলছে ঢাকার কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তারা যেতে পারবে না। তিনি এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে তো বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া উড়োজাহাজে যারাই যাবেন তাদের প্রত্যেকের করোনা নেই এমন সনদপত্র তো থাকবেই। আমেরিকায় বহু মানুষ এভাবে আটকে আছেন। তাদের এখন অনেকেই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। এক লাখ টাকার টিকেট তিন লাখ টাকার বেশি দিয়ে কিনে বসে আছেন। কিন্তু এয়ারলাইন্স নানা টালবাহানা করছে। বিষয়টি সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ইউরোপের কয়েকটি দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশী দেশে ফেরার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইলে আবেদন জানিয়েছেন। তাদের দেশে ফেরত আনতে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আর যেসব জায়গায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট আছে ওইসব দেশ থেকে বিমানের ফ্লাইটে তাদের দেশে আনা হবে। তারা অবশ্য বিভিন্ন কারণে ওইসব দেশে অবস্থান করছিলেন। এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে বিমান মন্ত্রণালয়ের।
বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, যারা উন্নত দেশগুলোতে ব্যবসায়ী কাজে, চিকিৎসায় অথবা বেড়াতে গিয়েছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি মাথায় রযেছে। কিন্তু তার চেয়ে জরুরী হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই না-মাল্লীপ থেকেও বিপুল অঙ্কের কর্মীকে প্রতিদিন দেশে আনা হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার দোহা থেকে ৪০৯ জন বাংলাদেশী দেশে ফেরত আনা হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীন ছাড়া প্রায় সব দেশের সঙ্গেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ।
তবে বিদেশী নাগরিকরা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে চাইলে তাদের ভাড়ায় বিশেষ ফ্লাইট ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। বিদেশে আটকা পড়া বাংলাদেশীদেরও একইভাবে ফেরানো হচ্ছে।