করোনায় মাংস উৎপাদনকারী খামারগুলোর দৈনিক ক্ষতি ৩০ কোটি টাকা

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে মাংস উৎপাদনকারী খামারের ব্যবসা। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, গত আড়াই মাসে গবাদি পশুর বিক্রি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। প্রতিদিন যেখানে ৪৫ কোটি টাকার মাংস বিক্রি হতো সেটা ১৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। মাংস উৎপাদনকারী খামারগুলো দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।করোনা ভাইরাসের ছুটির শুরু থেকে এ পর্যন্ত লোকসান হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রচুর ফ্রোজেন মাংস আসায় এ শিল্প আরো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশে প্রায় তিনলাখ ছোট বড় ডেইরি খামার রয়েছে। বছরে এসব খামারে ৭৬ লাখ মেট্রিক টন মাংস এবং ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। মাংস উৎপাদনের প্রতিটি গরুকে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিশেষ পরিচর্যা করতে হয়। এই সময়ে শুধু খাবার বাবদ প্রতিটি গরুর পেছনে ব্যয় হয় ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। অন্য খরচ তো সঙ্গে থাকছেই। চলমান পরিস্থিতিতে তিন মাসের জন্য খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফসহ প্রান্তিক খামারিদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কুষ্টিয়া জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও লিয়াকত আলী ডেইরি ফার্মের মালিক মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে মাংস উৎপাদকারী খামারিরা খুবি লোকসানের মধ্যে রয়েছে। আমরা প্রান্তিক খামারিরা একদমই গরু বিক্রি করতে পারছি না। অধিকাংশ গরু খামারেই আটকে রয়েছে। টাকার অভাবে গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতে না পারায় শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি আগে এক গাড়ি খড় কিনতে পারতাম ৪০ হাজার টাকায়। এখন আমাদের এক গাড়ি খড় কিনতে হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। ভুষির দাম ছিল ৯০০টাকা বস্তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকা বস্তা। আগে খামারিরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে গো-খাদ্য নিয়ে খামার চালাতেন, এখন বাকিও বন্ধ।’
ফরিদপুর জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মার্শ অ্যাগ্রোর মালিক মীর কাশেম আলী বলেন, ‘এখন ষাঁড় গরুর দাম খুবি কম। আমরা বিক্রি করতে পারছি না। হাটবাজার বন্ধ থাকায় অধিকাংশ গরু খামারেই আটকে রয়েছে। এমনেই আমরা গরু বিক্রি করতে পারছি না, এদিকে দিন দিন গো-খাদ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সময়মতো গরু বিক্রি করে টাকা দিতে পারবো কিনা সেই ভয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের খাবার সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই খামার চালানোর জন্য কিছু গরু কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়েছে।’
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, ‘প্রান্তিক খামারিরা হাট বন্ধ থাকায় গরু কেনা বেচা করতে পারছে না। যারা মাংস উৎপাদন করে তারা সাধারণত দোকান থেকে বাকিতে খাবার এনে খামার চালায়, পরে গরু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন। এখন তো খামারিরা গরু বিক্রি করতে পারছে না, যে কারণে দোকান থেকে খাবার বাকিতেও দিচ্ছে না। খাবার বাকিতে না দেওয়ার কারণে গরুকে ঠিক মতো খাবার খাওয়াতেও পারছে না, গরু শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে খামারিরা খুবি ক্ষতির সম্মুখীন। করোনা আসার আগে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার গবাদি পশু বিক্রি করতো খামারিরা, সেটা ১৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এসব মূলত মাংস হিসেবে বিক্রি হতো খুচরা পর্যায়ে। বিক্রি কমে যাওয়ায় খামারের খরচ মেটানোই কঠিন হয়েছে খামার মালিকদের জন্য। বর্তমানে ৭০ শতাংশ খামারিদের বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এদিকে ভারত থেকে প্রচুর মাংস আসতেছে। বাংলাদেশে কোনোরকম পরীক্ষা করা ছাড়াই ডুকছে। মাংসের যে রোগ সেটি পরীক্ষা করার মতো ল্যাবরেটরি সাধারণত আমাদের দেশে নেই। ভারতের সার্টিফিকেট দেখেই মাংস আনতেছে। ভারত থেকে প্রচুর ফ্রোজেন মাংস আসায় আমাদের এ শিল্পের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।’