কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে সীমিত আকারে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত হলেও সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে নিয়মিত আদালত খুলছে না। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় জরুরি মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ৪টি বেঞ্চের পরিবর্তে ১১টি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। রবিবার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত এই ১১টি একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
এই ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানিতে আগ্রহী আইনজীবীদের ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করতে হবে। শনিবার এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালকুদার, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া, মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানকে ভার্চুয়াল আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এজন্য প্রথমে তিনটি একক বেঞ্চ (বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ) এবং পরবর্তীতে আরো একটি বেঞ্চ (বিচারপতি জে বি এম হাসান) গঠন করা হয়েছিল।
আজ জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিচারপতি বোরহান উদ্দিনকে রিট, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ফৌজদারি মোশন ও সংশ্লিষ্ট জামিনের আবেদন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে রিট, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমকে ফৌজদারি মোশন ও সংশ্লিষ্ট জামিনের আবেদন, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনকে ফৌজদারি মোশন ও সংশ্লিষ্ট জামিনের আবেদন, বিচারপতি জে বি এম হাসানকে রিট, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে দুদক ও মানি লন্ডারিং আইনের মামলা ও সংশ্লিষ্ট জামিন আবেদন, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে ফৌজদারি মোশন ও সংশ্লিষ্ট জামিনের আবেদন, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়াকে দেওয়ানী মোশন ও সংশ্লিষ্ট আবেদন, মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে ভ্যাট, কাস্টমস, অ্যাডমিরালটি, ব্যাংক কম্পানি আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনের আবেদন এবং বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানকে রিট আবেদনের শুনানির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এই অধ্যাদেশ জারি পর গত ১০ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফুলকোর্টসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিনই ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালত জন্য আলাদা আলাদা ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে এই নির্দেশনা মেনেই আইনজীবীরা আবেদন করছেন এবং আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে।