করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সারা দেশই কার্যত লকডাউনের আওতায়। জরুরি কিছু পণ্য পরিবহন চালু থাকলেও অন্যান্য পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে যাত্রী পরিবহন। ফলে পরিবহন খাতের ৭০ লাখ শ্রমিক আজ চোখে অন্ধকার দেখছেন। মুদ্রণশিল্পের কয়েক লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। একই অবস্থা নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪০ লাখ শ্রমিকের। বেশির ভাগ দোকানপাট, বিপণীবিতান বন্ধ থাকায় এই খাতের লাখ লাখ শ্রমিকও আজ বেকার। তাঁত, রি-রোলিং, মোটর মেকানিক, লবণ, চিংড়ি, সংবাদমাধ্যম, হাসপাতাল-ক্লিনিক, হকার, রিকশা-ভ্যানচালক, সিকিউরিটি গার্ডসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন আরো বহু লাখ শ্রমিক। তাঁরাও আজ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন সাহায্যের জন্য হাত পাততে। সরকারি ত্রাণ পেতে দীর্ঘ লাইনেও শামিল হচ্ছেন, কিন্তু সেই ত্রাণও জুটছে না সবার কপালে। এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কী করবেন, তা তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না।
শুধু শ্রমিক-কর্মচারীরাই বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরাও আজ চরম সংকটময় অবস্থায়। ঘর ভাড়া, শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা, বাধ্যতামূলক গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের পরিষেবা বিল এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সব ধরনের ঋণের সুদ অব্যাহত থাকায় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা দিশাহারা। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এ অবস্থায় গার্মেন্টশিল্পের মতো সহসা এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সরবরাহ ও বিপণনের ওপর যদি লকডাউন শিথিল না করা হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর পাশাপাশি মালিকদের ভাগ্যেও নেমে আসবে অন্ধকার। তাঁতশিল্প, পোশাক, বাটিক-বুটিক ও ফ্যাশনের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের সামনে সারা বছরে প্রধান টার্গেট থাকে রোজার ঈদ। তাদের বেচাকেনা বা আয়-উপার্জনের একটা বড় অংশই সম্পন্ন হয় এই সময়ে।
এ বছর তাদের সব আয়োজন ভেস্তে যেতে বসেছে। ঈদের বাকি আছে ২০ দিনেরও কম। এখনো যদি দোকানপাট না খোলা হয় তাহলে তাদের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারের রোজার ঈদ শ্রমিক-কর্মচারী বা মালিক কারো জন্যই বিশেষ সুখকর হবে না। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। করোনার কারণে যেসব খাতের সেবা ও উৎপাদন বন্ধ থাকবে সেসব খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের তালিকা করে বিশেষ উৎসব ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতে সেবা ও উৎপাদন দ্রুত চালু করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা চাই ঈদ সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক।