কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বজুড়ে মহামারী সৃষ্টি করা নোভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তার এখন পর্যন্ত ২১০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখ ১১ হাজার ৪২৬ জন। মারা গেছেন দুই লাখ সাত হাজার ৭৩৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আট লাখ ৮৭ হাজার ৯৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাবিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ১৬৪ জন। মারা গেছেন ৮১৮ জন। এছাড়া করোনার বিস্তার রোধে ৭ সপ্তাহ আগে জারি করা বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা করেছে ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৩১ জন।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ের পর রবিবারই ইতালিতে দৈনিক মৃত্যুর রেকর্ড সর্বনিম্ন হয়েছে। এ পরিস্থিতে দেশটির কর্তৃপক্ষ লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ মে থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। অল্প অল্প করে লোকজনকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। তাদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। পার্কগুলোও খুলে দেয়া হবে কিন্তু স্কুলগুলোতে সেপ্টেম্বরের আগে ক্লাস শুরু হবে না। গত ৯ মার্চ থেকে ইতালিয়ানরা দেশজুড়ে জারি করা ঘরবন্দী দশায় আছে। প্রত্যেককেই তাদের বাড়ির দরজা থেকে কয়েকটি রাস্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম পর্বে বইয়ের দোকান, ড্রাই ক্লিনার্স ও স্টেশনারির মতো ছোট কিছু দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। একসঙ্গে অনেক ক্রেতার সমাগম হয় না বলে এসব দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর সংক্রমণের সংখ্যা যদি ফের বাড়তে থাকে তবে সরকার ফের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। রবিবার ইতালিতে কোভিড-১৯ এ ২৬০ জনের মৃত্যু হয়। ১৪ মার্চের পর থেকে এটিই দৈনিক মৃত্যুর সর্বনিম্ন সংখ্যা। দেশটিতে মৃতের মোট সংখ্যা ২৬ হাজার ৬৪৪। যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ জন।
ইরানে আরও ৯৬ মৃত্যু ॥ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট পাঁচ হাজার ৮০৬ জন। সেই সঙ্গে দেশটিতে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯১ হাজার ৪৭২। যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৯৬ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯১ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০ হাজার ৯৩৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে তিন হাজার ১১ জনের অবস্থা গুরুতর।
ফ্রান্সে আরও ২৪২ মৃত্যু ॥ করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে আসছে। কমছে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় দৈনিক মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২৪২ জন। সংখ্যার বিচারে বড় অঙ্ক হলেও আগের দিনের চেয়ে এ মৃত্যুহার এক তৃতীয়াংশেরও কম বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবরে বলা হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে করোনায় হাসপাতালগুলোতে ১৫২ জনের মৃত্যু হয়। এটি ৫ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া নার্সিং হোম ও কেয়ার সেন্টারগুলোতে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারী হিসেবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৮৫৬ জনে। মোট শনাক্ত এক লাখ ৬২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় আছেন প্রায় চার হাজার সাত শ’ জন। সেরে উঠেছেন প্রায় ৪৫ হাজার। ফ্রান্সে দিন দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক কমছে। দেশটিতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় লকডাউন কি করে শিথিল করা যায় তা ভাবছে সরকার।
কানাডায় মৃত্যু বেড়ে ২৪৮৯ ॥ কানাডায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আড়াই হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। স্থানীয় সময় রবিবার কানাডার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টেরেজা ট্যাম জানান, শেষ ২৪ ঘণ্টায় সরকারী হিসেবে কানাডায় করোনায় মৃত্যু দুই হাজার ৩৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪৮৯। এই সময়ের ভেতর শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৪২৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৭৯১ জনে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের পথ আরও অনেক বাকি বলে জানান তিনি। দেশটির পাবলিক হেলথ এজেন্সি জানিয়েছে, কানাডায় করোনায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা কমছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপের চেয়ে কানাডায় তুলনামূলক করোনার প্রকোপ অনেক কম। সেখানে অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সব নাগরিককে ঘরে থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় কানাডা এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১১৫৭ মৃত্যু ॥ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নয় লাখ ৮৭ হাজার ১৬০। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৫ হাজার ৪১৩ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৫০৯। অপরদিকে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১৫৭ জনের। আগের দিনের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। একদিন আগেই করোনায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৪১৯ এবং মার গেছেন দুই হাজার ৬৫ জন। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে নিউইয়র্কে। এমনকি যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই ওই অঙ্গরাজ্যের। নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৯৯১। প্রাণহানি ঘটেছে ২২ হাজার ২৭৫ জনের। এরপরেই রয়েছে নিউ জার্সি। সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ নয় হাজার ৩৮ এবং মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৩৮ জনের। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৯৩৮ এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৮৯৯ জন। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৯০৩ এবং মৃত্যু এক হাজার ৯৩৩। ক্যালিফোর্নিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৫৪১ এবং মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭১৮ জনের।