স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি ৭২ ঘণ্টার হরতালের শুরুতে গতকাল রবিবার নগরীর সুবিদবাজার, শাহী ঈদগাহ, মদিনা মার্কেট, সাগরদীঘিরপার ও সোবহানীঘাটে হরতাল সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। হরতাল সমর্থনকারীরা বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে। সংঘর্ষ ও পিকেটিংকালে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরনের শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ করলেও বেশী সময় রাজপথে দেখা যায়নি।
এদিকে, বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হরতাল সমর্থনকারীদের ধাওয়া করে এ সময় তারা ৫ জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তারা হচ্ছেন-নগরীর মেন্দিবাগ এলাকার মৃত আলী হোসেনের পুত্র কালিঘাট ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন (৩৫) তার দোকান কর্মচারী নগরীর রায়নগর মিতালী ১১৭ নং বাসার মৃত রইছ আলীর পুত্র অভি আহমদ (২২), নগরীর মদিনা মার্কেট কালিবাড়ীর জাকারিয়ার পুত্র ও বিদ্যানিকেতন স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র আবু জুহুর (২০), নগরীর লন্ডনী রোডের আবু তালেবের পুত্র ও বিদ্যানিকেতন স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান (১৯) এবং নগরীর আম্বরখানা এলাকার বেলাল মিয়ার পুত্র ও আম্বরখানা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী আব্দুল্লাহ (৩৫)। এর মধ্যে আবু জুহুর ও মোস্তাফিজুর রহমান এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী।
কালিঘাটের ব্যবসায়ী হেলাল আহমদ অভিযোগ করেছেন, তিনি রিক্সাযোগে তার কর্মচারী অভি আহমদকে সাথে নিয়ে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টায় মদিনা মার্কেটে যাচ্ছিলেন। বাগবাড়ি এলাকার মদিনা হাউসে পৌঁছামাত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রিকশার গতিরোধ করে তাদের মারপিটে তারা দু’জন আহত হন। এ সময় হেলাল আহমদের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা, আইফোন, পাউন্ড ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদেরকে জামায়াত শিবির কর্মী পরিচয় দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে । হেলাল আহমদ এসময় পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের ঘটনা তুলে ধরলে নেতাকর্মীরা মানিব্যাগ ও আইফোন ফেরত দেয়। কিন্তু টাকা ও পাউন্ড ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রবিউল হক মাসুম উল্লেখিত ঘটনার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, হরতালের শুরুতে গতকাল রবিবার সকাল ৭টায় নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় একটি মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে শ্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে সেখানে ৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় নেতাকর্মীরা। প্রায় একঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির টহলদল সেখানে পৌছুলে পুলিশের সাথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীর দরগাহ গেইট থেকে শিবির নেতা কর্মীরা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি চৌহাট্টা সিভিল সার্জন অফিসের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় শিবির নেতাকর্মীরা রাস্তায় আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে। সমাবেশ চলাকালে শিবির কর্মীরা রাস্তায় ইট, পাথর দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তবে পুলিশ আসার সাথে সাথে তারা সটকে পড়ে।
এদিকে, হরতালে গতকাল ভোর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরীর কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে বেশীর ভাগ যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে না গেলেও দূরপাল্লার যানবাহন কয়েকটি ছেড়ে গেছে। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ জানান, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকে নগরীতে টহল অব্যাহতের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি ছিল। তবে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।