কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর আরেক দফা বাড়ল অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের দাম। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, চিনি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মতো পণ্যের দাম বাড়ায় বাজারে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ফলে মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রায় বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের অন্য শহরাঞ্চলের মানুষ খোলা সয়াবিন ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকেন। এই সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ৫-৭ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আরও ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে ভোক্তাকে। একই অবস্থা দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজারে। শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজির কারণে কমছে না চালের দাম। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর থেকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির পেছনে অতি মুনাফাখোর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দ্রুত পণ্যমূল্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
জানা গেছে, অসাধু সিন্ডিকেট কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, চিনি এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে। এদের সহযোগিতা করছে উচ্চ পর্যায়ের কিছু সরকারী আমলা-কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক বাজারের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম এখন কমতির দিকে রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ফের রফতানি কার্যক্রম শুরু করায় পামঅয়েল নিয়েও কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। অথচ বাজেট ঘোষণার দিন ‘দাম সমন্বয়ের’ নামে আরেক দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ পামঅয়েলের দাম কমানো হলেও সেই বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বলা হচ্ছে না। এমনকি মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পামঅয়েল নিয়ে কোন কথা বলছে না। ভোক্তারাও বিষয়টি না জেনে বেশি দামে পামঅয়েল কিনছেন। ফলে আগের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পামঅয়েল। দেশের শীর্ষ ৬-৮টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারী বিভিন্ন অভিযানের মুখে ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়েছে। একাধিক মামলা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও মালিকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকড় পেরিয়ে এরাই বাজার অস্থিরতায় কাজ করছে।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, সোমবার প্রতিলিটার পামঅয়েল বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭২ টাকায়। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হলে প্রতিলিটার ১৫৮ টাকা দিয়ে কিনতে পারতেন একজন ভোক্তা। একইভাবে সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের ক্যান সরকার নির্ধারিত মূল্য ৯৯৭ টাকার পরিবর্তে ১০১০-১০২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি না হওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। কাঁচাবাজার থেকে নিত্যপণ্যের কেনাকাটা করছিলেন জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, বাজেট ঘোষণার পর থেকে ভোজ্যতেলের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। পামঅয়েলের দাম কমানোর বিষয়টি তিনি জানেন না উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আগের মতো বেশি দামে সব ধরনের পামঅয়েল বিক্রি করছেন। মুদিপণ্যের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, পামঅয়েলের দাম কমানোর বিষয়টি মিলার থেকে শুরু করে পাইকার ব্যবসায়ীরা গোপন করেছেন। এ কারণে খুচরা বাজারে পামঅয়েলের দাম কমেনি। প্রতিলিটার পামঅয়েল এখনো ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজেট ঘোষণার পর আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। প্রতিকেজি সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭২-৮৫ টাকা, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৫৫-৬০ এবং মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোন চাল পাওয়া যাচ্ছে না। চালের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আটা, ডাল, চিনি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামও চড়া। ভোক্তারা বলছেন, বাজেট ঘোষণার পর কোন জিনিসের দাম কমেনি। বরং বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।