কাজিরবাজার ডেস্ক :
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতাবাহী মাহে রমজান আমাদের কাছে উপস্থিত। হুজুরে আকরাম (স.) ইরশাদ করেছেন : আওয়ালুহু রাহমাহ, ওয়া আউসাতুহু মাগফিরাহ ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান নার।- ‘এ মাসের প্রথম ১০ দিন অবারিত রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মহান আল্লাহর ক্ষমার প্রতিশ্রুত আর শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত।’ এ পবিত্র হাদিসের মর্ম অনুধাবন করে বলা যায়, কত না প্রয়োজন বর্তমান পরিস্থিতিতে এ মাসকে আমাদের কাছে পাওয়ার। কারণ মরণব্যাধি মহামারী কোভিড-১৯ এর কড়াল থাবায় আজ বিশ্ব সভ্যতা, স্থিতিশীলতা, দৈনন্দিন জীবন সবকিছুতে ধ্বংসের দামামা বেজে উঠছে। একমাত্র বাঁচার উপায় পরওয়ার দিগার রাহমানুর রাহিমের দয়া করুণা, ক্ষমা ও মার্জনার ওপর। মাহে রমজানকে আদবের সঙ্গে পালন করতে জানলে আল্লাহ বিশেষভাবে বান্দার প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি দেন। এজন্য শুরুতেই প্রভুর কাছে প্রার্থনা : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু বিল আমানে ওয়াল ইমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম’- হে আল্লাহ এ নয়া চাঁদ আমাদের জন্য শান্তি ও ইমান বৃদ্ধির, নিরাপত্তা ও ইসলামের বিকাশের প্রতীক বানাও।
করোনার ভয়াবহতা থেকে নিজেকে, নিজের পরিবার প্রিয়জনকে, নিজের সমাজবলয়কে রক্ষার ধর্মীয় ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকে রক্ষার কিছু করণীয় ও আমল।
যেমন পরওয়ার দিগারের কাছে ক্ষমার হাত পাতা, আমরা এ মাসে লোক দেখানো ফ্যাশনেবল ইবাদাত বন্দেগি পরিহার করব। নামাজ কালামে একটু বেশি সময় নেব। নামাজে একাগ্রতা নিয়ে আসব। যেন আমি আল্লাহকে দেখছি, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। আমি না দেখলেও তিনি অবশ্যই আমাকে দেখছেন। একে বলে নামাজ খুসু খুজু। তিলাওয়াত ও তাসবিহের সময় অর্থের দিকে খেয়াল রাখব এবং দয়াময়ের দয়া ও ক্ষমা কামনারত থাকব। নবীজি (স.) বলেছেন : দোয়া ছাড়া কিছুই মানুষকে হিফাজত করে না। দোয়াই হলো ইবাদাতের সারবত্তা। অশ্রু সজল নয়নে দোয়া মুনাজাতে অংশ নিতে হবে। মনে বিশ্বাস রাখতে হবে ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। মজলুমের দোয়াও কবুল হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে এ মাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে হালাল হারাম সমাজে প্রতিষ্ঠার, অজু গোসল ধোয়া মোছার মাধ্যমে নিজেকে এবং পরিবেশকে পাক পবিত্র, পরিচ্ছন্ন রাখার। পানাহারে রান্নাবান্নায় রুচিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত আয়োজন করা। মহানবী (স.) বলেছেন পরকালে একমাত্র জাহান্নামই হবে হারাম খাওয়া শরীরের ঠিকানা। আর দুনিয়াতে হারাম বস্তু খাওয়ার কারনে এসবের জীবাণু মানবদেহ ও পরিবেশকে অসুস্থতা অকল্যাণের দিকে প্রভাবিত করে। চিন্তা চেতনায় ভাল মন্দ বুঝার ক্ষমতা লোপ পায়। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা হাঁচি কাশি দেয়া ইসলামী আচরণ বিরুদ্ধ কাজ। এমনকি হাই দিলেও মুখে আদবের সঙ্গে বাম পাঞ্জার পিঠ দিয়ে আলতোভাবে চেপে রাখতে বলা হয়েছে। পরপর যেন মুমিন আল্লাহর প্রশংসা করে তারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। আজকাল গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন হাঁচি কাশি ও হাইয়ের মাধ্যমে দেহ থেকে অগুনতি জীবাণু বেরিয়ে যায় এবং তা পাশের লোককে সংক্রমিত করে।
বর্তমান সময়ে সর্বমহল থেকে বেশি বেশি করে হাত মুখ ধোয়ার তাগাদা আসছে। বলা হচ্ছে নাকে পানি দেয়ার জন্য। আর এসব কিছুর উত্তম প্রশিক্ষণ হলো দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী বিধি বিধান মেনে চলা। একজন মুসলমান দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তাকে অন্তত ৫ বার অজুর সময় ১৫ বার হাত ধুতে হয়। ১৫ বার মুখ ধুতে হয়, ১৫ বার দিতে হয় নাকে পানি। অজুর সময় হাতে পানি নিয়ে নাক দিয়ে টেনে মুখ দিয়ে বের করার উপকারিতার কথাও বলা হয়েছে। নাকের উপরিভাগের অংশের নাম হায়শামি। নবীজি বলেছেন ফা-ইন্নাস শায়তান ইয়াঈশু আলা হায়শামী। শয়তান হায়শামিতে বসবাস করে। পানির আঘাতে সে পালিয়ে বেড়ায়। আর আজকের বিজ্ঞান বলছে এ জায়গাতেই করোনা জীবাণু চারদিন ধরে অবস্থান করে। মাহে রমজানের শুরু থেকে আমাদের দৈনন্দিন দায়িত্ব ও আমলের মধ্যে নতুন করে জরুরী ভাবনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আল্লাহ আমাদের সুষ্ঠুভাবে সিয়াম সাধনার তাওফিক দান করুন।