বিশ্বে আক্রান্ত সাড়ে ২৭ লাখ

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র এখন এক মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে। দেশটিতে দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর মৃত্যুর মিছিল নিয়ে হাজির হচ্ছে করোনা। মৃত্যু ও সংক্রমণ দুই দিক থেকেই এ ভাইরাস সবচেয়ে ভয়াল চেহারা নিয়েছে দেশটিতে। শেষ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশটিতে করোনায় নতুন করে আরও ৩ হাজার ৩৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারী হিসেবে সেখানে এ ভাইরাসে মোট মৃত্যু ৫০ হাজার ২৪৩ জনে দাঁড়াল। এছাড়া সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৪ জন। মারা গেছেন এক লাখ ৯১ হাজার ৮৯৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন সাত লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৯ জনে।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় জনস হপকিন্স স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জানায়, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪৬ লাখেরও বেশি মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৯ হাজার মানুষের। সেরে উঠেছেন ৮৫ হাজার ৯২২ জন। শনাক্তদের মধ্যে ১৫ হাজারের অবস্থা গুরুতর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে, মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫৪৯ জন মারা গেছেন। আর আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জন।
লকডাউন বাড়ল মালয়েশিয়ায় ॥ পবিত্র রমজান উপলক্ষে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১২ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বারনামা এক অনলাইন প্রতিবেদনে লকডাউন আরও দুই সপ্তাহ বাড়ানোর ওই সরকারী ঘোষণার কথা জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দীন ইয়াসিন স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেন। পবিত্র রমজান শুরুর আগের রাতে তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন কিছুটা শিথিল করার কথাও জানান। মহামারী করোনার প্রতিরোধ ও বিস্তার রোধে গত ১৮ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় লকডাউন চলছে। চলমান এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২৮ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশটির সরকার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। লকডাউনের কারণে দেশটির সরকারী-বেসরকারী সব অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা, গণপরিহন এবং খাদ্য উৎপাদন ও পরিবহন শিল্প এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে। মালয়েশিয়ায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৫ হাজার ৬৯১ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ৯৬ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৮ জন, আর মারা গেছেন একজন। আক্রান্তদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৫২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের হার মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

সিঙ্গাপুরে একদিনে আক্রান্ত ৮৯৭ ॥ দুই সপ্তাহ ধরে সিঙ্গাপুরে হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। শুরুর দিকে মহামারী নিয়ন্ত্রণে দারুণ সফলতা দেখালেও গত কয়েকদিনে সেই বাঁধ অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। প্রথম এক মাসে যেখানে তাদের করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক শ’রও কম। ইতোমধ্যেই সেই সংখ্যা ১২ হাজার ৭৬ ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে (এমওএইচ), গত পাঁচদিনের মধ্যে আজই প্রথম নতুন রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামল। নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ডরমিটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী শ্রমিক। মাত্র ১৩ সিঙ্গাপুরিয়ান ও স্থায়ী অধিবাসীর শরীরে করোনা পাওয়া গেছে। দেশটিতে মারা গেছে মাত্র ১২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯২৪ জন।
মৃত্যুহীন দক্ষিণ কোরিয়া ॥ গত ৪০ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাণঘাতী করোনার কারণে কারও মৃত্যু হয়নি। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। শুক্রবার কোরিয়ান সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনসন (কেসিডিসি) জানিয়েছে, চারদিন ধরে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা একক সংখ্যায় নেমে এসেছে। নতুন করে প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬ জন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ৭০৮। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৪০ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ হাজার ৫০১ জন। ৫৫ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
ইতালিতে আরও ৪৬৪ মৃত্যু ॥ যতই দিন যাচ্ছে, করোনা মহামারীতে মৃত্যুর মিছিল ততদীর্ঘ হচ্ছে ইতালিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ তালিকায় নাম লিখিয়েছেন আরও ৪৬৪ জন। এর আগের দিন দেশটিতে মারা গিয়েছেন অন্তত ৪৩৭ জন। ইতালির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি জানিয়েছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫৪৯ জন। মৃতের সংখ্যা বাড়লেও সেখানে ধীরে ধীরে কমছে সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৪৬ জন। আগের দিন দেশটিতে ৩ হাজার ৩৭০ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মাত্র দুই মাসেই সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৭৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন প্রায় এক হাজার করোনা রোগী। বুধবারও দেশটিতে চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৬৯৯ জন। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৮৪৮ জনে। বুধবার আইসিইউতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৮৪ জন। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে বের হয়েছেন অন্তত ১১৭ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৫৭৬ জন রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি প্রথমবারের মতো করোনা টেস্ট করা ব্যক্তির সংখ্যা প্রকাশ করেছে। ছয় কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত এক কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে অনেকেরই দুই-তিনবার পরীক্ষা করায় মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ।
জার্মানিতে আরও ২২৭ মৃত্যু ॥ করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যথেষ্ট কম হলেও সংক্রমণের হার প্রায় একইরকম চড়া। সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫৩ হাজার ৩০৭ জন ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার রবার্ট কশ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩৭ জন। টানা তিনদিন বাড়তে থাকার পর নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলো। বৃহস্পতিবারও জার্মানিতে ২ হাজার ৩৫২ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২২৭ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ৫৭৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ছয় হাজার আট শ’ জন।
ইউরোপে মৃত্যু ও আক্রান্ত ॥ ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য দেশের মধ্যে স্পেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জন। মারা গেছেন ২২ হাজার ৫২৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯২ হাজার ৩৫৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৭৪০ জন। নতুন করে মারা গেছেন ৩৬৭ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮৩ জন। মারা গেছেন ২১ হাজার ৮৫৬ জন। সুস্থ হয়েছে ৪২ হাজার ৮৮ জন। ব্রিটেনে আক্রান্ত এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৮ জন। মারা গেছেন ১৮ হাজার ৭৩৮ জন। তুরস্কে আক্রান্ত এক লাখ এক হাজার ৭৯০ জন। মারা গেছেন দুই হাজার ৪৯১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৪৯১ জন। রাশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৬২২ জন। মারা গেছেন ৬১৫ জন। সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৬৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৪৯ জন। নতুন করে মারা গেছেন ৬০ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ২৯৩ জন। মারা গেছেন ছয় হাজার ৬৭৯ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন দশ হাজার ১২২ জন। নতুন করে আক্রান্ত এক হাজার ৪৯৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৮৯ জন।

আমিরাতে মৃত্যু বেড়ে ৫৬ ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৫১৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৪ জন। আমিরাতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরর তথ্যমতে, সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭৫৬ জন, মারা গেছেন ৫৬ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬৩৭ জন।
মিসরে রাত্রিকালীন কার্ফু ॥ করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পবিত্র রমজান মাসজুড়ে মিসরে রাত্রিকালীন কার্ফু জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবোলি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কার্ফু শুরু হবে ৮টার পরিবর্তে রাত ৯টা থেকে এবং চলবে সকাল ৬টা পর্যন্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ২৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ হাজার ৮৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির পক্ষ থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই সবাইকে পরিবারের সঙ্গে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আর রমজান উপলক্ষে সব ধরনের গণজমায়েতে প্রার্থনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ও খাবার সরবরাহের জন্য রেস্তরাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। যদি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কার্ফু কঠোর করা হবে। মিসর মার্চ মাস বিমানবন্দর ও হোটেল বন্ধসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতে মৃত্যু বেড়ে ৭২২ ॥ কেরল রাজ্যে ৪ মাসের শিশুসহ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত প্রায় ১৭০০। একদিনে সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের নিরিখে ফের নয়া রেকর্ড গড়ল ভারত। নতুন করে এক হাজার ৬৮৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। একলাফে মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৫০২ জনে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৭২২ জনের। সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ১২ জন।
পাকিস্তানে মৃত বেড়ে ২৩৭ ॥ পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসেব অনুযায়ী, ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ১১ হাজার ১৫১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৫২৭ জন।
লাতিন আমেরিকায় আক্রান্ত ও মৃত্যু ॥ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত ৫০ হাজার ২৩০ জন। মারা গেছেন তিন হাজার ৩৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬ হাজার ৫৭৩ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩০ জন। পেরুতে আক্রান্ত ২০ হাজার ৯১৪ জন। মারা গেছেন ৫৭২ জন। সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৪২২ জন। চিলিতে ১১ হাজার ৮১২ জন। মারা গেছেন ১৬৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন পাঁচ হাজার ৮০৪ জন।