এবারে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছে নতুন এক তাৎপর্য ও ভাবনা নিয়ে। চলতি বছরের ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে এবং বিশ্বব্যাপী পালিত হতে যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। বছরব্যাপী নানা বর্ণাঢ্য আয়োজন-উৎসবের সমাপ্তি হতে না হতেই শুরু হবে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। অমল ধবল অমলিন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। নিঃসন্দেহে দেশ ও জাতির জীবনে এ এক অভূতপূর্ব মাহেন্দ্রক্ষণ, যার সমুজ্জ্বল সূত্রপাত ইতিহাসের সেই সুদূর ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। অথবা বলা যায় তারও আগে দেশ বিভাগের পরপরই। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, মাতৃভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলান, শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন ও জনগণের ম্যান্ডেট, সাত মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা- এ সবই মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিকাশ ও অভ্যুদয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। নিবিড়ভাবে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত। তদুপরি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউনেস্কো। যে কারণে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বঙ্গবন্ধু তখন জেলে অন্তরীণ থাকলেও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন ও দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী এবার পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীও। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য এটি গর্ব ও আনন্দের বৈকি।
একুশ মানে মাথা নত না করা। কথাটির যথার্থতা বার বার প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশে। একুশ শিখিয়েছে অন্যায়, অবিচার ও অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, প্রতিরোধী হতে। বায়ান্নর সেই ঐতিহাসিক একুশে ফেব্রুয়ারি ৬৭ বছর পেরিয়ে ৬৮ বছরে পদার্পণ করেছে। অমর একুশের চেতনা আজও অমলিন। সেদিন মৃত্যুঞ্জয়ী বাংলার তরুণরা মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাজাত্যবোধের যে মশাল প্রজ্বলিত করেছিলেন, সেই আলো দেশের সীমানা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে। বর্তমানে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বের সর্বত্র।
একুশ বাঙালিকে অন্যায়, অবিচার ও অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে। তাই এ দেশের মানুষ কখনই সামরিক ও স্বৈরশাসনের কাছে মাথা নত করেনি। আপোস করেনি গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে। আর এসব কিছুরই প্রেরণা হয়ে আছে মহান একুশে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালিকে একাত্তরের মতো প্রতিবাদী প্রতিরোধী সাহসে শত্রুকে প্রতিহত করার প্রেরণা জোগায়। একুশ মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, নাশকতা, নৃশংসতা ও মাদকের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে এসেছে। বাঙালি এই দিনে আবার জেগে ওঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সুসংহত করার সুদূর অঙ্গীকারে।