স্টাফ রিপোর্টার :
‘অমানবিক যন্ত্রণা, বন্দিদশা ও ক্ষতির’ হাত থেকে মুক্তির জন্য হোটেল কোয়ারেন্টিন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন নিউহাম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, ইউকে’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লাকি মিয়া (লক্ষ্মী)। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তিনি। এ সময় তিনি হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের নানা দুর্গতি-দুর্ভোগ, আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রশাসনিক বিভিন্ন অবজ্ঞা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ট্রাস্টের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি এম. সমছু মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাপে এসে বিশ্বের সর্বাধিক আক্রান্ত ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে যেখানে হোম কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চলমান। সে সব দেশে আগত ও প্রত্যাগতদের তেমন আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। এ ব্যবস্থায় দেশের সর্বত্র করোনা প্রসারের সম্ভাবনাও কম।
তিনি বলেন, করোনার ভয়াবহ প্রথম ধাপ পার হয়ে যখন দ্বিতীয় ধাপে। এ সময় দেশের ও বিদেশের অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঠিক সেই সময়ে এ ব্যবস্থায় সিলেট ও অন্যান্য জেলার মধ্যে দেখা দিয়েছে বৈষম্য। দেশের অন্যান্য জেলায় বিদেশ থেকে আগতদের হোটেল কোয়ারেন্টেইনে অনূর্ধ্ব ৭ দিন রাখা হলেও সিলেটে আগত প্রবাসীদের হোটেল কোয়ারেন্টেইনে রাখা হয় ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। তাই তাদের প্রতিদিন হোটেল ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে গুনতে হয়। এছাড়া খাবার-দাবারও বেশিদামে কিনে আনাতে হয়। সব মিলিয়ে দেশে আগত একজন প্রবাসীকে বিমান ভাড়া ছাড়াও গড়ে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা করে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। হোটেল কোয়ান্টেইনের কারণে প্রবাসীরা দেখতে পারছেন না তাদের স্বজনদের। স্বদেশে অবস্থান করে মৃত্যুশয্যায় থাকা আপনজনদের শেষবারের মতো দেখারও সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
তিনি বলেন, যখন দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কমে এসেছে, চারিদিকে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। চলছে সভা-সমাবেশ মাহফিল এমনকি খেলা ও বাণিজ্য মেলাও। ঠিক সেই সময়ে বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের ক্ষেত্রে হোটেল কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা কতটুকু মানবিক? এ প্রশ্ন প্রবাসীদের।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির হোটেল ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের আমলা কামলা ও কর্তা-ব্যক্তিরা। প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধ আয়ের একটা মুখ্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে অসাধু কর্তাব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের আমলা-কর্মচারীদের। শুধু আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি নয়, বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের সাথে করা হচ্ছে চরম দুর্ব্যবহার। আর্থিক লাভের আশায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবাসীদের চরমভাবে হয়রানি করে থাকেন। করোনার নমুনা নিতে এসেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে করা হয় দুর্ব্যবহার। পরীক্ষা নিরীক্ষা পিছিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের হোটেল কোয়ারেন্টিন মেয়াদ।
এ সময় তিনি মিরের ময়দানের একটি হোটেলে থাকা এক প্রবাসীর সঙ্গে সিলেট কোতোয়ালি থানার এক এসআইয়ের চরম অমানবিক ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মৃত্যু শয্যায় থাকা ওই প্রবাসীর মাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। দেখতে যেতে চাইলে তার সাথে ওই পুলিশ কর্মকর্তা গালমন্দসহ চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে এসএমপি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে দেখার সুযোগ মেলে। কিন্তু এর আগেই ওই প্রবাসীর মায়ের মৃত্যু হয়।
হোম কোয়ারেন্টেইনের বদলে হোটেল কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় দেশজুড়ে করোনা প্রসারের আশংকাও বেশি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টেইনে বাসা-বাড়িতে পরিবারের লোকজন ছাড়া কারও তেমন আসা যাওয়া থাকে না। আগত প্রবাসী থাকবেন একটি নির্দিষ্ট কক্ষে। ব্যতিক্রম ঘটলেও পরিবারের বাইরে সংক্রমণের তেমন কোন সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু হোটেল কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটক, অন্যান্য মানুষ ও হোটেলের কর্মচারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ সময় করোনা রোধে প্রয়োজনে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর মত ‘হোম আইসোলেশন’ ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানোর পাশাপাশি হোটেল কোয়ারেন্টিন বাতিলের জানান তিনি। এ সময় ট্রাস্ট নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।