॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
লেখকের মস্তিষ্ক নি:সৃত উৎপাদন হিসেবে লিখনীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব স্বীকৃত। বিশেষত মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে গ্রন্থস্বত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ফলে ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে গ্রন্থস্বত্বের বিধান নির্ণয় সময়ের অনিবার্য প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। গ্রন্থস্বত্ব অন্যান্য সম্পদের মতো একটি সম্পদ। প্রত্যেক মালিক নিজের সম্পদ সংরক্ষণ ও বিক্রির অধিকার রাখেন। তাই গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ করা ও এর বেচাকেনা পূর্ণ অধিকার গ্রন্থ প্রণেতার রয়েছে। গ্রন্থস্বত্ব অর্থ যে কোন বিষয় সম্পর্কিত আক্ষরিক লিখিত রচনার মালিকানা। যে মালিকানা উক্ত গ্রন্থ প্রকাশের অধিকার প্রদান করে। অতএব গ্রন্থস্বত্ব বলতে কোন বই বা রচনাকর্ম প্রকাশ করার অধিকার। পৃথিবীরত হস্তলিপি আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই মানুষ লিখে আসছে। মনের ভাব প্রকাশের দুটি প্রধান মাধ্যম রয়েছে বলা ও লেখা। কোন বক্তব্য ও বিষয় দীর্ঘদিন ধরে রাখার উৎকৃষ্ট উপকরণ হল লেখা। ভুলে গেলে ও কোন লেখা দেখে বিষয়টি মনে করা সম্ভব। তাই সর্বকালেই লেখার গুরুত্ব ছিল। কাগজ উদ্ভাবনের আগপর্যন্ত মানুষ গাছের ডাল, পাতা, হাড্ডি, পাথর ইত্যাদি বস্তুতে লিখত। একটি সময় কাগজ আবিষ্কার হলে ও ছাপাখানা ছিল না। হাত দ্বারাই লেখার প্রয়োজন মিটানো হতো। সাধারণ পুস্তকের চেয়ে ধর্মীয় পুস্তক লেখার গুরুত্ব ছিল বেশি। তবে মুদ্রনযন্ত্র ও ছাপখানা আবষ্কিারের পর বই পুস্তক ছাপানোর ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচিত হয়। বিশেষত আজকের আধুনিক যুগে বিশ্বের প্রতিটি দেশে কোটি কোটি বই, পত্র পত্রিকা ম্যাগাজিন ছাপা হচ্ছে। বরং প্রকাশনা একটি শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্বকালে বাণিজ্যিক ভাবে বই পুস্তক প্রকাশ ও বাজারজাতের তেমন কোন ধারণা ছিল না। লেখক বই কিতাব লেখার পর অন্য লোক দ্বারা কপি করা হতো। তারাও হাতেই কপি করত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বই পুস্তক ও কিতাবাদি প্রণয়নে মুসলমানদের বিস্ময়কর অবদান রয়েছে। তাঁরা হাত দ্বারাই কিতাব লিখেছেন। এসব মনীষী নিজেদের গ্রন্থের কোনো স্বত্ব রাখতেন, নাকি রাখতেন না, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ইতিহাস জানা যায় না। তাদের পাহাড়সমূহ নিষ্টা ও বই পুস্তকের বাণিজ্যিকীরণ না থাকা ও এর অন্যতম কারণ। কিন্তু বর্তমান যুগে গ্রন্থের স্বত্ব সংরক্ষণ করার যে ধারা শুরু হয়েছে তা শরীয়তের আলোকে কতটুকু বৈধ? উপরন্ত, গ্রন্থস্বত্ব কোনো প্রকাশনীর বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করার বিধান কী? গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ ও বেচাকেনার ব্যাপক প্রচলন শুরু হওয়ার পর ফকীহ ও মুজতাহিদগণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। শরীয়তের মূলনীতির আলোকে সমাধান দেওয়ার চেষ্টাও করেন।
শাব্দিক দৃষ্টিকোন থেকে গ্রন্থস্বত্বের কয়েকটি প্রতিশব্দ রয়েছে, যেমন লেখকস্বত্ব, মেধাস্বত্ব, কপিরাইট ইত্যাদি। ব্যবহারিক দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো দ্বারা কোন মৌলিক রচনা অনুলিপি তৈরির অধিকারকে উদ্দেশ্য করা হয়। অতএব, গ্রন্থস্বত্ব বা কপিরাইট বলতে কোন কাজের উপর তার মূল রচিয়তার একক, অনন্য অধিকারকে বোঝানো হয়। কপিরাইটের চিহ্ন হলো । বিরাটাকার পরিব্যাপ্তিতে ছাপানোর প্রসার হওয়ার আগ পর্যন্ত কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব উদ্ভাবিত হয়নি। সতের শতকের শুরুর দিকে ছাপাখানাগুলোর একচেটিয়া আচরণের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে ব্রিটেনে এরকম একটা আইনের ধারণা জন্ম নেয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় চার্লস বইগুলো অনৈতিক অনুলিপি তৈরির ব্যাপারে সচেতন হয়ে রাজকীয় বিশেষাধিকার প্রয়োগ করে লাইসেন্স বিধিমালা ১৬২২ জারি করেন; এ ফলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত/ অনুমোদিত বইগুলোর একটি নিবন্ধন তালিকা প্রণয়ন করে এক একটি অনুলিপি সমস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হয়। দ্যা ষ্টাচু অব অ্যান ছিল মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত প্রথম রচনাকর্ম যা এর লেখককে নির্দিষ্ট সময়ের মেধাস্বত্ব প্রদান করে এবং সেই নির্দিষ্ট মেয়াদের পর মেধাস্বত্ব সমাপ্ত হয়ে যায়। তবে প্রথম কপিরাইট আইন প্রণীত হয় ১৭০৯ সালে ইংল্যান্ডে। ১৯১৪ সালের এক সংশোধীর মাধ্যমে এ উপমহাদেশকে কপিরাইট আইনের আওতাভুক্ত করা হয়।
দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার ১৯১৪ সালের কপিরাইট আইন বাতিল করে ১৯৬২ সালে কপিরাইট অধ্যাদেশ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে করাচিতে কেন্দ্রিয় কপিরাইট অফিস প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ঢাকায় একটি আঞ্চলিক কপিরাইট অফিস স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত আইনের মাধ্যমে ১৯৬২ সালের অধ্যাদেশের কিছু ধারা সংশোধন করে আঞ্চলিক অফিসকে জাতীয় পর্যায়ের দপ্তরে মর্যাদা প্রদান করে। সে সময় এ অফিসটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবতীকালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে কপিরাইট অফিসকে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে কপিরাইট অফিস জাতীয় পর্যায়ের একটি আধা বিচার বিভাগীয় (ছঁধংর লঁফরপরধষ) প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য ২০০০ সালে কপিরাইট আইন জারীর পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানী আমলের (১৯৬২ সালের) সংশোধিত অধ্যাদেশ ও ১৯৬৭ সালের কপিরাইট রুলস এর আওতায় কাজ করেছে কপিরাইট অফিস, ঢাকা। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ২০০০ সালের কপিরাইট আইনটি সংশোধন করা হয়। আবিষ্কার সম্পর্কিত অধিকার। এটি একটি ব্যাপক শব্দ। এর অধীনে অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বইপুস্তক লেখা ও অনুবাদ করা ও আবিষ্কার, কোনো যন্ত্রপাতি বানানো, ক্যালিগ্রাফি বা ডিজাইন নকশা এসব ও আবিষ্কার। এমনকি কোনো গান ও সাহিত্যেও আবিষ্কার। প্রশ্ন হচ্ছে এসবের উদ্ভাবনকারী এগুলোর স্বত্ব সংরক্ষণ ও বেচাকেনা করতে পারবেন কিনা।
হানাফী ব্যতীত বাকি প্রসিদ্ধ তিন মাযহাবÑমালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলীদের অভিমত হল, শুধু দৃশ্যমান বস্তুই মাল নয়; বরং অদৃশ্য উপকারিতা এবং সুযোগ-সুবিধাও মাল হতে পারে। সুতরাং দৃশ্যমান বস্তুর মতোই অদৃশ্যমান উপকারিতার বেচাকেনাও বৈধ হবেÑ যদি তা স্থায়ী হয়। হানাফীদের মতে, মাল বলতে কেবল দৃশ্যমান বস্তুকে বোঝায়। অদৃশ্যমান বস্তু; যেমন উপকারিতা ও সুযোগ-সুবিধা মাল বলে গণ্য নয়। যেহেতু তা মাল নয়, তাই তা বেচাকেনাও করা যাবে না। এ হিসাবে গ্রন্থস্বত্বও একটি নিরেট স্বত্ব এবং সুযোগÑসুবিধার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় হানাফী ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহদের মতে এটি মাল-সম্পদ; তাই গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ করা এবং বিক্রি করা বৈধ। ইতোপূর্বে আমরা হানাফীদের প্রাচীন ফকীহদের মতটি উল্লেখ করেছি। এর আলোকে গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ বেচাকেনা করা অবৈধ হয়; কিন্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হানাফীদের মাঝেও ভিন্নমত রয়েছে। তা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য।
কুরআন শিক্ষা দেয়ার বিপরীতে পারিশ্রমিক নেওয়ার বৈধতার সঙ্গে কিয়াস করলে প্রমাণিত হয়, যে কোন জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষাদান বা প্রসারের নিমিত্তে রচিত গ্রন্থ থেকে আর্থিক উপকারিতা গ্রহণ বৈধ। তাঁর কুরআন শিক্ষা দানের পারিশ্রমিক গ্রহণের বৈধ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ হাদীসটি উল্লেখ করেন: “তোমরা যা কিছুর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নাও তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব অগ্রগণ্য। একজন কারিগর যেমন তার মেধা ও শ্রম দিয়ে কোন শিল্প বিনির্মাণ করলে তার বিনিময় গ্রহণ করেন, একজন গ্রন্থকারও তদ্রƒপ নিজ মেধা-মনন দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করলে বিনিময় গ্রহণ তার জন্য বৈধ হবেÑএটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে গ্রন্থস্বত্ব একটি উরফে পরিণত হয়েছে। উরফে শরীয়াহ বিরোধী কোন অনুষঙ্গ না থাকলে তা বৈধ। লেখক তার লিখনীর ব্যাপারে দুনিয়া ও আখিরাতে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। বইয়ে অন্তভূক্ত যে কোন ধরনের ভুল তথ্যের ব্যাপারে তিনি দায়ী থাকেন। আল্লাহ বলেন: “প্রত্যেক ছোট ও বড় বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে।”এটিই স্বাভাবিক নিয়ম যে, কোন লেনদেনের ঝুঁকি বহনকারী এ থেকে আগত লভ্যাংশের অধিকারী হন।
পূর্বসূরী অনেক আমিল তাঁদের রচিত অনেক রচিত অনেক গ্রন্থ বিক্রয় করেন। গ্রন্থ প্রণয়নে তাঁদের যে কালি, কাগজ খরচ করেছেন তার চেয়ে অত্যন্ত চড়া মূল্যে সেসব গ্রন্থ বিক্রি হয়েছে। যেমন আবূ নু‘আইম তাঁর “হিলয়াতুল আওলিয়া” গ্রন্থটি চারশত দিনারে বিক্রি করেন; ইমাম ইবন হাজার আলÑআসকালানী তাঁর একটি গ্রন্থ বিক্রি করেন তিনশত দিনারে। তাদের এ কার্যক্রম সমসাময়িক কোন আলিম বিরোধিতা করেছিলেন বলে জনা যায়নি। যা থেকে প্রমাণিত হয়, পূর্বসূরীাও গ্রন্থস্বত্বের বিষয়টি স্বীকৃতি দিতেন। গ্রন্থস্বত্ব একটি বৈধ অধিকার ও সম্পদ। গ্রন্থকার অনুবাদক গ্রন্থের স্বত্ব সংরক্ষণ করতে পারেন। ইচ্ছে করলে বিক্রি করতে পারেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ এ গ্রন্থ প্রকাশ ও বাজারজাতকরণের অধিকার রাখে না। এমনটি করা নাজায়িয ও হারাম হবে। অধিকন্ত, তা চুরি ছিনতাই ও খেয়ানত বলে বিবেচিত হবে। কারণ, রাসূলে কারীম স. ইরশাদ করেন: কোনো মুসলমানের সম্পত্তি তার পূর্ণ সম্মতিÑসন্তুষ্টি ছাড়া নেওয়া হালাল হবে না। নিম্নের হাদীস থেকেও গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ ও বেচাকেনা বৈধ হওয়ার দলীল গ্রহণ করা যায়: যে ব্যক্তি প্রথমে কোনো বস্তুর দিকে অগ্রসর হল, যার দিকে কোনো মুসলিম অগ্রসর হয়নি, তাহলে এটা তার। অনাবাদি ভূমি দখল ও চাষাবাদ করলে মালিকানা ও স্বত্ব অর্জিত হওয়ার বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সকল ফকীহ এ বিষয়ে একমত। এর ওপর কিয়াস অনুমান করে গ্রন্থস্বত্ব এবং আবিষ্কারস্বত্বের বিষয় বিধান জানা সম্ভব।
একদল আলিমের মত, গ্রন্থস্বত্ব রাখা অবৈধ। লেখক, সস্কলক বা অনুবাদকÑ কেউই গ্রন্থের স্বত্ব রাখতে পারবে না। বইটি দ্বারা সকলেই সমভাবে উপকৃত হতে পারবে, যে কেউ ছাপিয়ে বাজারজাতও করতে পারে। যেহেতু গ্রন্থস্বত্ব রাখা অবৈধ, তাই গ্রন্থস্বত্ব বিক্রি করাও বৈধ নয়। এ দলের মধ্যে রয়েছেন, মুফতী মুহাম্মত শফী, আহমদ হাজ্জী আল-কুরদী, তাকী উদ্দীন নাবাহানী প্রমুখ। তাঁরা তাঁদের মতের পক্ষে যেসব প্রমাণ উপস্থাপন করেন তার মধ্যে রয়েছে: গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষিত হলে ইলম প্রকাশে ও বিতরণে বাধা দেওয়া বলে গণ্য হবে এবং তা ইলম গোপন করার শামিল। ইলম গোপন করা বৈধ নয়। শরীয়তের ইলম গোপন করার ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহানবী (স.) বলেন: কেউ কোন ইলমের বিষয় জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর তা গোপন করলে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিধান করানো হবে। অতএব, গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ করা নাজায়িয এবং বিক্রিয় বিধানও অনুরূপ। কোনো গ্রন্থ ক্রয়কারী সবধরনের উপকার হাসিলের অধিকার পায়। সে নিজের টাকা দিয়ে বইটি কিনে এনেছে। বইটিতে তার অধিকার অর্জিত হয়েছে। কাউকে হাদিয়াও দিতে পারে, বিক্রিও করতে পারে। তদ্রƒপ বইটি ছাপিয়ে বাজারজাতও করতে পারবে। তাঁরা বলেন, গ্রন্থস্বত্ব একটি নিরেট স্বত্ব; কোনো দৃশ্যমান বস্তু নয়। মাল হওয়ার জন্যে দৃশ্যমান বস্তু হওয়া আবশ্যক।
গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষিত রাখলে ইলম গোপন করা হয় না। গ্রন্থকার নিজে তার গ্রন্থ প্রকাশ করছে অথবা কোনো প্রকাশনীকে প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছে। গ্রন্থস্বত্বের প্রশ্ন তো গ্রন্থ প্রকাশ করার সময়ের আসে। তাই ইলম গোপন করার অভিযোগ অযৌক্তিক। দুয়েক জনের কাছে ইলম পৌঁছে দিলেও দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েকশ ছাত্র ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিলে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ধারণাক্ষমতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাত্রকে ভর্তির সুযোগ প্রদান করে। সবাইকে ভর্তি করে না। এখন কি এ কথা বলা যাবে যে, তারা ইলমকে গোপন রাখার লিপ্ত হল? কারণ, তারা সবাইকে ইলম শিক্ষা দেয়নি! তদ্রƒপ এখানেও এ কথা বলা অবান্তর ও অযৌক্তিক।
এটি একটি যুক্তি মাত্র। যুক্তিটি অন্যায্য। বই কেনার দ্বারা সবরকমের অধিকার হাসিল হয় না। বাজার থেকে একটি কিনে এনে নিজের নামে ছাপিয়ে প্রকাশ করা কি জায়েয হবে? অন্যের বই নিজের নামে চালিয়ে দেওয়াও কি বৈধ? খেয়ানত হবে না? তাই যদি হয়, তাহলে বলুন, আমরা আমাদের টাকার মালিক। এখন এ টাকার মতো অনুরূপ টাকা ছাপিয়ে বাজারজাত করা কি বৈধ হবে? কখনোই বৈধ হতে পারে না। ঠিক তেমনি, বাজার থেকে একটি ব্রান্ড বা বিখ্যাত কোম্পানির লোগো নকল করে ওই পণ্য বানিয়ে বাজারজাত করতে পারবেন?: বিষয়টি সম্পূর্ণ নাজায়িয। তদ্রƒপ গ্রন্থ কিনে আনলেও তা ছাপিয়ে প্রকাশ করতে পারবে না, হারাম ও অবৈধ কারণ, গ্রন্থটি স্বত্ব আরেকজনের। স্বত্ত্বাধিকারীর অনুমতি ব্যতীত তার স্বত্বে হস্তক্ষেপ করা অন্যায় ও খেয়ানত বলে বিবেচিত হবে। আমরা শক্তিশালী দলিল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করেছি যে, মাল হওয়ার জন্য দৃশ্যমান বস্তু হওয়া আবশ্যক নয়। তাই তাঁদের এ বক্তব্যও একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
গ্রন্থস্বত্ব অন্যান্য সম্পদের মতো একটি সম্পদ। প্রত্যেক মালিক নিজের সম্পদ সংরক্ষণের অধিকার রাখে এবং ইচ্ছা হলে তা বিক্রিও করতে পারে। গ্রন্থস্বত্ব এবং অন্য নিরেট স্বত্বসমূহও মাল বলে বিবেচিত হয়। তাই গ্রন্থস্বত্ব সংরক্ষণ করা বৈধ এবং এর বেচাকেনাও জায়িয। অনুমতি ছাড়া কারো হস্তক্ষেপ করা অন্যায় ও চুরি। সুতরাং কোনো লেখকের স্পষ্ট অনুমতি ব্যতীত তার কোনো বই ছাপানো অথবা নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া নাজায়িয। হ্যাঁ, লেখক যদি পরিষ্কার বলে দেয় যে, আমার অমুক বই অথবা আমার সকল বই যে কেউ ছাপিয়ে প্রকাশ করতে পারে, তখন তা বৈধ হবে। লেখক অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো বই প্রকাশ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে অনেকেই খেয়ানতের শিকার হচ্ছে। সর্বপ্রকার খেয়ানত থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।