নিশ্চিত করুন প্রবাসীর নিরাপত্তা

17

জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। দেশের জনশক্তি বিদেশে গিয়ে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই অর্জন করেনি, দেশের জন্য বয়ে এনেছে সুনাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করছি জনশক্তি রপ্তানিতে আগের মতো প্রবৃদ্ধি নেই। অন্যদিকে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। সাগরপথে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে সলিল সমাধি ঘটেছে।
আমরা জানি, দেশের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও অর্থপ্রবাহ সচল রাখতে জনশক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনশক্তি বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাস যেন এক বিভীষিকা হয়েই দেখা দিয়েছে। একদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা ও অন্যদিকে প্রবাসে গিয়ে কাজ না পাওয়া ও অবৈধ হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে। চলতি বছরের ৪৪ দিনেই কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছেন ৪০৯ কর্মী। এদিকে সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসেই ফিরে আসছেন শত শত প্রবাসী। সংখ্যাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বৈধ-অবৈধ বাছবিচার নয়, সৌদি পুলিশ অভিযানকালে যাঁকে সামনে পাচ্ছে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এক কাপড়ে, খালি হাতে এঁরা স্বদেশের মাটিতে পা রাখছেন অনেকটা জীবন্ত লাশ হয়ে। সরকারি হিসাবে গত এক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৭ হাজার ৬৬২ জন প্রবাসী শ্রমিকের লাশ দেশে ফেরত এসেছে। ২০১৯ সালেও তিন হাজার ৬৫৮ জনের মরদেহ ফিরেছে দেশে। অর্থাৎ গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের বেশি প্রবাসীর লাশ এসেছে। কারণ হিসেবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও স্বাভাবিক মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি সূত্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই সৌদি থেকে দেশে ফিরেছে ১৭৫ নারীসহ তিন হাজার ৬৩৫ বাংলাদেশি।

একটু সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় ঘরবাড়ি, জায়গাজমি বন্ধক রেখেও মানুষ প্রবাসে পাড়ি জমায়। কিন্তু বিদেশে গিয়েই অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। অনেকেই ফিরে আসেন খালি হাতে সর্বস্ব হারিয়ে। একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে কর্মহীনতা, জীবনটাই যেন অনেকের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়াতে হবে। গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তি। বিদেশে আমাদের মিশনগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রবাসী কর্মীর নিরাপত্তা।