কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি অপারগ হয় সেক্ষেত্রে তাদের ছাড়াই ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে একথা বলেন বলে জানানো হয় ইউজিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সম্প্রতি এক সভায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথমবর্ষে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় উচ্চশিক্ষার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউজিসি।
বেশিরভাগের আগ্রহ থাকলেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রক্রিয়ায় যেতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিতে রাষ্ট্রপতির তাগাদা থাকলেও এই অনীহায় উদ্বেগ ক্যাবের।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা এখন জাতীয় দাবি উল্লেখ করে তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র বা সরকার অসহায় ও নতি স্বীকার করতে পারে না বলে মনে করে ক্যাব।
ক্যাবের মতে, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষায় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সেজন্য জাতীয় প্রত্যাশা থেমে থাকতে পারে না।
সাক্ষাৎকালে ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কমিশনের সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ, ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও কমিশনের জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ক্যাব সভাপতি বলেন, সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা সংক্রান্ত ইউজিসির পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ইউজিসি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা নিতে খুবই অনীহা। এতে নাগরিক অধিকার বিপন্ন হচ্ছে। সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। ইউজিসি সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করে দিলে ক্যাব সেটি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচষ্টা চালাবে।
সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা আমাদের এক্ষেত্রে একটি ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে। সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, সবাই চাচ্ছে সমন্বিত পদ্ধতিতে এবারে ভর্তিপরীক্ষা হোক। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পশ্চিমা বিশ্ব যদি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তিপরীক্ষা নিতে পারে আমরা কেন পারবো না? সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দৃঢ়। এটি বাস্তবায়নে কোনো ছাড় নেই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি অপারগ হয় সেক্ষেত্রে তাদের ছাড়াই ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি বাস্তবায়ন করবো। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হবে।
সভায় সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কোথায় মানসম্পন্ন, দক্ষ শিক্ষক পাবে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বুঝতে হবে উচ্চশিক্ষা নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজ অরাজকতা চলছে। কেউ কেউ সার্টিফিকেট বাণিজ্য করছে। ফলে মেধাবী ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে না। উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা অনুচিত।