যখন দেশের রাজনীতিতে চরম দুঃসময়, অনেক রাজনৈতিক নেতাই যখন আপসের পথে পা বাড়িয়েছেন, জলাঞ্জলি দিয়েছেন নিজেদের আদর্শ, তখন সব ভয়, বাধা তুচ্ছজ্ঞান করে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। চেপে বসা শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহসও দেখিয়েছেন তিনি। রাজনীতি যখন সম্পদ বৃদ্ধির বড় মাধ্যম হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত তখন তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে নির্মোহ থাকা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিমন্ত্রী-মন্ত্রী হয়েও তিনি সাদাসিধা জীবন যাপন করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হয়েও তিনি নিজেকে বদলাননি বা বদলাতে চাননি। ১৯৯৬ থেকে সব নির্বাচনে জনগণের রায় পেয়েছেন। মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। দলে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু নিজের নামের ওপর কোনো দাগ লাগতে দেননি কোনো দিন। আচরণে সব সময় একই রকম থেকেছেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মী-সহযোদ্ধারা তাঁকে সেভাবেই স্মরণ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। এলাকার মানুষের আস্থা ছিল তাঁর প্রতি। বিজয়ী হয়েছিলেন বিপুল ভোটে। কিন্তু মাত্র ৬৮ বছর বয়সে ক্যান্সারের কাছে হেরে গেলেন তিনি। শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে যেদিন স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠালেন, ঠিক সেদিনই পাড়ি জমালেন পরপারে। রাজনৈতিকজীবনে ব্যক্তিত্বের আভা ছড়ানো এই নিপাট ভদ্রলোক রাজনীতিকের নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতার একজন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সে সময় পালন করেছেন দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব। তাঁর ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তখন রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবেলা করছেন। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। স্কুলজীবনেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে। কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায়ই ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে লন্ডনে পাড়ি জমালেও রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হননি। সেখানে আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তিনি। পরে নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। সর্বশেষ দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। জনগণ ও দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে রাজনীতিকে কিভাবে এগিয়ে নিতে হয় সৈয়দ আশরাফ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দলীয় কর্মীদের জন্য ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সৃষ্টিশীল উন্নত চিন্তার এই রাজনীতিক ছিলেন সততা ও নিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক—এভাবেই তাঁকে স্মরণ করেছেন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনবদ্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। কমিটমেন্ট ছিল রাজনীতির প্রতি। সত্য বলতে দ্বিধা করতেন না। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন একান্ত আপনজন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার ভার দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে অর্পণ করেছে, সেই অভিযাত্রায় সৈয়দ আশরাফের মতো নেতৃত্বের সহযোগিতা তাঁর বড় প্রয়োজন ছিল। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হলো দেশ।