কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের কাছে গ্যাস বিতরণ ও উত্তোলন কোম্পানিগুলোর বকেয়ার পরিমাণও আকাশ ছুঁয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্যাস কোম্পানিগুলোর মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক সমন্বয় সভায় এসব বকেয়ার বিষয়ে এই খাতের ৯টি প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন দিয়েছে।
কোম্পানিগুলো জানায়, তারা বারবার গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে। কেউ কেউ কিছু টাকা পরিশোধ করলেও বকেয়া পাওনার পরিমাণ কমছে না। এই পাওনা টাকা আদায়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আলোচনা করে দুই পক্ষের অভিমত নিয়ে টাকা কীভাবে পরিশোধ করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই বকেয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়ার পরিমাণ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)-এর। এই সংস্থাটি গ্রাহকের কাছে প্রায় ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বাকি পড়েছে। এরপর আছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। তাদের গ্রাহকের কাছে বকেয়া ৭৩৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরপর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। তাদের পাওনা ৬৮৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৬৭৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)-এর গ্রাহকের কাছে পাওনা ৬৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাছে পাবে ৬৩৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাপেক্সের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৪৪১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) তাদের গ্রাহকের কাছে পাবে ২২১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাবে ১৫২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এই হিসাবে গ্যাস কোম্পানিগুলোর মোট বকেয়ার পরিমাণ ৮ হাজার ৮৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া পড়ে থাকা কোম্পানি তিতাস। এই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আবাসিকের গ্যাস বিল যেন বকেয়া না থাকে, সে জন্য প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করছি। কিন্তু এই প্রক্রিয়াও চলছে ঢিমেতালে। একসঙ্গে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারে গ্যাস বিতরণ শুরু হলে এই সংকট কেটে যাবে।’ তবে, শিল্পে এই সংকট কাটানোর উদ্যোগ সবার আগে নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানেই সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া থাকে। কোনও কোনও শিল্পের উদ্যোক্তা মামলা করে বিল দেওয়া আটকে রেখেছেন। এসব বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এখনও সমাধান হয়নি। এজন্য অনেক টাকাই গ্রাহকের কাছে পড়ে রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বারবার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চিঠি দিচ্ছি। অনেকের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। এরপরও যারা বকেয়া টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করবে অথবা বকেয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রকম পদক্ষেপ নেবে না, তাদের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগে বিল বকেয়া থাকলেও কোনও সমস্যা হতো না। এখন এলএনজি আমদানি করতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের বিল পরিশোধ করতে হয়। বিল পরিশোধ না কলে পেট্রো বাংলাকে গুনতে হয় জরিমানা। এজন্য বিতরণ কোম্পানির ওপরও বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছে।’ যেন তারা ঠিকঠাক বিল আদায় করে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।