যুক্তরাজ্যে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের আপাতত বৈধতা নয়

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার সিদ্বান্ত থেকে সরে এসেছে ব্রিটিশ সরকার। এ খবরে ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাস করছেন এমন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিদের মধ্যে জেগে ওঠা আশা হঠাৎ করে থমকে গেছে ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এর আগে লন্ডনের মেয়র থাকাবস্থায় ২০০৮ সালে ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র বিহীন অবস্থায় বসবাসরতদের বৈধতা দেবার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরও গত জুলাইয়েও সেই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। তখন তিনি বলেছিলেন, তার সরকার ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে দ্রুত পথ খুঁজবে।
চলতি সপ্তাহে ব্রিটেনের সংসদে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি ডা. রোশেনা এলিন খান প্রশ্নোত্তর পর্বে বৈধ কাগজপত্র বিহীন অভিবাসীদের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চান। তার প্রশ্নের জবাবে সরকারের হোম অফিস মিনিস্টার (অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী) ভিক্টোরিয়া এটকিনস জানান, সরকার একটি অভিবাসন নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে যা নিরাপদ এবং আইনি রুটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে লোকদের স্বাগত জানায় ও উদযাপন করে, তবে অবৈধ অভিবাসনকে বাধা দেয়।
ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন এমন অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার জন্য কিছু সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। সরকারের এ বিষয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে সরে আসার সমালোচনা করেছেন তারা।
ফোকাস অন লেবার এক্সপ্লয়টেশন ( ফ্লেক্স ) এর প্রধান নির্বাহী লুসিয়া গ্রান্ডা এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ব্রিটেনে বসবাস ও কাজের বৈধ অনুমোদনবিহীন মানুষকে সাধারণ ক্ষমা দিলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হত।
রেনিমেইড ট্রাস্টের ডিরেক্টর ওমর খান বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব প্রতিশ্রুত সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি ছিল নিছকই কথার কথা। তা এখন প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্ষমতায় এসই ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত প্রায় ৫ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দেয়ার বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ব্রিটেনে বসবাস করছেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাদের বৈধতা দেবার আশ্বাস মিলেছিল। তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন, নতুন জনশক্তি না এনে পুরনো যারা বৈধতাবিহীন বসবাস ও কাজ করছেন, তাদের বৈধতা দিলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। ব্রিটিশ অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত করে এদের কাজ থেকে ট্যাক্স অর্জন করতে পারবে সরকার।
এখনকার বাস্তবতা হলে, ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের রাজনীত,ি অর্থনীতি এখন টালমাটাল। হোম সেক্রেটারি নতুন অভিবাসন প্রক্রিয়ার শুধু রূপরেখার ঘোষণা দিয়েছেন। একসময় ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে আসা এখনকার চেয়ে অনেক সহজ ছিল।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মন্ত্রিসভায় থেরেসা মে তখনকার হোম সেক্রেটারি থাকাকালে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন নীতিতে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেন। এ কারণে গত ১০ বছরে ব্রিটেনে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অভিবাসনের হার নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
ব্রিটেনে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের সাধারণ ক্ষমা দেয়া হয়নি। যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত বিরতিতে দেয়া হয়।