কাজিরবাজার ডেস্ক :
দক্ষ জনশক্তি গড়তে উপজেলা-পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা বাড়াতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি করে কারিগরি বিষয় এবং নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ভোকেশনাল কোর্স চালুর মাধ্যমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মোট ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলার ৩২৯টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হবে। এই স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় ৪টি ট্রেড ও ৪টি স্বল্পমেয়াদি প্যারা ট্রেড কোর্স চালু করা হবে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ১টি করে কারিগরি বিষয় এবং নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হবে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটবে। এতে কর্মক্ষম যুবকদের দেশে ও বিদেশে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারে চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের জন্য আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মোট ব্যয় ২০ হাজার ৫২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে থাকলেও সেখানে কোনও বরাদ্দ অনুমোদন করা ছিল না। একনেকে অনুমোদনের আগে প্রকল্পটি চলতি এডিপিতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্পের অগ্রাধিকারক্রমে উচ্চ অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। অ্যাকাডেমিক ভবন, ওয়ার্কসপ ভবন ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ক্যাম্পাসে থাকবে শিক্ষক ডরমিটরি, ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী নিবাস।
সূত্র আরও জানায়, চলমান ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে সরকার শিক্ষার ওপর প্রাধান্য দিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘দেশে-বিদেশে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মক্ষম যুবকদের দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করতে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা এবং প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে প্রস্তাবিত কারিগরি স্কুল ও কলেজগুলোয় সাধারণ শিক্ষার কারিক্যুলামে ষষ্ঠ হতে অষ্টম শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আলোচনাক্রমে পরবর্তী সময়ে নিষ্পত্তি করবে।’ এই শর্তে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন সুপারিশ করেছে বলে জানায় পরিকল্পনামন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।’ একইসঙ্গে দেশে বিদেশে যেকোনও চাকরি বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।