মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সব দেশেই সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ বা সংস্থা রয়েছে; যদিও দেশভেদে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামের ভিন্নতা রয়েছে, কর্মপরিসরও ভিন্ন হয়। এজাতীয় সংস্থার কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য জনমনোস্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের স্থিতি রক্ষা। বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির নাম ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ (ইংরেজি নাম সংক্ষেপে—ডিএনসি)। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। আইনের নিরিখে মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এর ওপর ন্যস্ত। অবৈধ মাদকদ্রব্য নির্মূলের দায়িত্বও তার। অবশ্য দেশভেদে, সময়ভেদে, বৈধ-অবৈধ দ্রব্যের তালিকা ভিন্ন হয়; বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে সমাজে মতভেদও রয়েছে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন সাংবৎসরিক হয়নি এ সময়-ব্যাপ্তিতে। এবার চতুর্থবারের মতো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে ডিএনসি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাদকের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর হটলাইন নম্বর চালু হতে যাচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট কার্যকর করা, বন্দরে ড্রাগ ডিটেক্টর মেশিন স্থাপন, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন, মাদক কারবারিদের তালিকা প্রণয়ন এবং নতুন করে অভিযান পরিচালনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ডিএনসি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে এক্সাইজ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্টকে পুনর্বিন্যাস করে নারকোটিকস অ্যান্ড লিকার পরিদপ্তর গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ভিত্তিতে ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি আইন প্রণয়ন করে অধিদপ্তর গঠন করা হয়। এখন ২০১৮ সালের নতুন আইন অনুযায়ী চলছে অধিদপ্তর।
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার কাঁধে থাকলেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে সংস্থাটির। জনবল ও যানবাহনের অভাব রয়েছে। মাদকদ্রব্য শনাক্তকারী ও আলামত সংরক্ষণের যন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। প্রশিক্ষণ একাডেমি নেই। পরীক্ষাগারের অভাবও রয়েছে। রয়েছে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার অভাব। ৩০ বছরে ৩২ জন যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু যাঁরা অধিদপ্তরে নিয়োগ পেয়ে অভিজ্ঞ হয়েছেন, তাঁদের কেউ এখনো শীর্ষপদে নিয়োগ পাননি। দীর্ঘদিনেও যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়নি সংস্থাটির। এ অবস্থার মধ্যেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বহুমুখী চাপ সামাল দিতে হচ্ছে ডিএনসিকে। সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। মহাপরিচালক জানিয়েছেন, সীমাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা চলছে। নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ একাডেমি, নতুন পরীক্ষাগার স্থাপনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সমস্যা নিরসন করে, সীমাবদ্ধতা দূর করে এবং মাদকের সংজ্ঞা ও বিধি আরো স্পষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করুক এটাই আমাদের কামনা।