সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
নগরীর চাঞ্চল্যকর হোটেল অনুরাগের এমডি, শিল্পপতি ও লন্ডন প্রবাসী আতিকুর রহমান আতিক হত্যা মামলার রায়ে তার বন্ধু শফিকুর রহমান শফিকের ফাঁসি (মৃত্যুদন্ড) এবং অপর আসামী মামা সুমন ও খোকনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আকবর হোসেন মৃধা চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হচ্ছে, ঢাকার হাজারীবাগের ২৮ গণকটুলি লেনের হাজী রহমত উল্লাহর পুত্র শফিকুর রহমান শফিক (৩২) এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে- ঢাকার ললিত মোহন দাস লেনের মৃত আজমল হোসেনের পুত্র সুমন ওরফে মামা সুমন (৩০) ও একই এলাকার মৃত শরীফ মিয়ার পুত্র খোকন (৩০)। একই সাথে এই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী শফিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপর দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মামা সুমন ও খোকনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ মাসের কারাদন্ডপ্রাপ্ত প্রদান করা হয়েছে। রায় ঘোষনার সময় মামা সুমন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও ফাঁসির আসামী শফিক ও খোকন এ সময় পলাতক ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ধোপাদীঘির উত্তরপারে হোটেল অনুরাগের ৩য় তলার ৩২২ নম্বর রুমে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হোটেলের এমডি, শিল্পপতি ও লন্ডন প্রবাসী আতিকুর রহমান আতিক (৩৫)কে হাত, পা, গলা ও কোমরে রশি দ্বারা বেঁধে এবং মুখে ও উভয় ঠোঁটে কষ্টেপ এটে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নগরীর কুমারপাড়ার ১২/এ নং বাসার ও নিহত আতিকের পিতা হাজী মোঃ খুর্শিদ আলী বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ৮৮ (৩০-১১-১০)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৮ জুন কোতোয়ালী থানার মোঃ আব্দুল আলিম ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আদালত চার্জগঠন করে মামলার বিচার কার্য শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানী ও ১৭ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামী শফিকুর রহমান শফিককে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে উল্লেখিত জরিমানা এবং একই ধারায় মামা সুমন ও খোকনকে উল্লেখিত দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি এডভোকেট মফুর আলী ও বাদি পক্ষের আইনজীবী ও জেলা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি শামসুল ইসলাম, এডভোকেট আব্দুল মওদুদ কয়সর, মাহফুজুর রহমান, মশরুর চৌধুরী শওকত, ড. ফৌজিয়া সুলতানা এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট জোসনা ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার বাদি খুর্শিদ আলী, নিহত আতিকের স্ত্রী তামান্না ইসলাম, মা রেজিয়া বেগম ও চাচা শ্বশুর বদরুল ইসলাম মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মফুর আলী জানান, আদালতে ঘটনা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় শফিককে ফাঁসি আর খোকন ও সুমনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে শফিক ও খোকন বর্তমানে পলাতক রয়েছে।