তীব্র শীত ও ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস জাঁকিয়ে বসেছে সারাদেশে। অগ্রহায়ণ তার বিদায় ঘণ্টা বাজালে পারিপার্শ্বিক মানুষও শীতকে আমলে নেয়ার কর্মযোগে শামিল হয়। তার মধ্যে থাকে লেপ, কম্বল নামানো, শীতের বস্ত্র নিজের হাতের কাছে রাখা। প্রয়োজনে নতুন গরম কাপড় কেনাকাটারও ধুম পড়ে যায়। কিন্তু এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। তীব্র হাড় কাঁপানো শীতের জন্য অর্থাৎ, শীতটা এবার হঠাৎ এমনভাবে আসে যাতে সারাদেশ তীব্র ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে গরম কাপড় চোপড় কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হেমন্তের হিমেল হাওয়ার পর পৌষের ঠাণ্ডা আবহ যে মাত্রায় আসতে থাকে, সেখানে অনাকাক্সিক্ষতভাবে শীত জেঁকেও বসে। এবার হঠাৎ করে পুরো দেশকে শীতের কামড়ে কাতর হতে দেখা যায়। ফলে শীতবস্ত্রের বাজারেও দৃশ্যমান হয় উপচে পড়া ভিড়। অসহায় ছিন্নমূল, হতদরিদ্র, শিশু এবং অসুস্থ বৃদ্ধরাও পড়ে চরম দুর্বিপাকে। কুয়াশা ঢাকা প্রতিবেশে সূর্যের দেখা পাওয়াই ভার। সঙ্গে বইছে কনকনে ঠাণ্ডা শৈত্যপ্রবাহ। ফলে সর্বশরীরে কাঁপন লাগা ছাড়া উষ্ণতার কোন ছোঁয়াই পাওয়া যাচ্ছিল না। কুয়াশার চাদরে মোড়া, রবিহারা তেমন দিনে সাধারণ মানুষ টায়ার ও খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। শীত শুধু যে দেশবাসীকেই কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তা কিন্তু নয়, সারাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থার ওপরও ফেলেছে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বিশেষ করে নৌ এবং আকাশ পথ সময় বিপর্যয়ের নাজেহাল অবস্থায়। তার প্রভাব পড়তে সময় লাগছে না সড়কেও।
ঘন কুয়াশায় ফেরিঘাট কোন সময়সূচী মানতে পারছে না। সঙ্গত কারণেই নদীর দু’পাশে দীর্ঘ যানজটে যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ। শীতের প্রত্যক্ষ প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতেও। ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাইকেও শীতের সহযোগী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, পেটের পীড়া কিংবা ডায়রিয়া পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। পার্থক্য করা যাচ্ছে না দিন ও রাতের তাপমাত্রা। সর্বোচ্চ আর নিম্নের যে তাপ নির্ধারণ তাতে ফারাক খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে কয়েক দিন দাপিয়ে বেড়ানো এই শীতের প্রবাহ আস্তে আস্তে সহনীয় পর্যায়ে এসে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা হোক এবারের শীতের আমেজটা একটু অন্যরকমের, ভিন্ন মাত্রার। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে ছিন্নমূল অসহায় নিম্নবিত্তের মানুষদের। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করে হতদিরদ্রদের উপস্থিত সঙ্কট মেটাতে পারে সমাজের বিত্তবান শ্রেণী ও দাতা সংস্থাগুলো। এক্ষেত্রে সচেতন মানুষদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।