ঊর্ধ্বমুখী বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধির উদ্যোগ ॥ এস আলম গ্রুপের সব পেঁয়াজ কিনে নেবে টিসিবি

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঊর্ধ্বমুখী বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ লক্ষ্যে সমুদ্রপথের পাশাপাশি আকাশপথে আনা হবে পেঁয়াজ। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে বেসরকারীখাতের আরও কয়েকটি শিল্প গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমদানিতে যুক্ত হয়েছে সিটি গ্রুপ। মেঘনা, বসুন্ধরা, প্রাণ, স্কয়ার ও টিকে গ্রুপকেও পেঁয়াজ আমদানি করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এছাড়া দাম কমাতে বিদেশ থেকে আনা সব পেঁয়াজ কিনে নেবে রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি।
নিত্যপণ্য হিসেবে সারাবছরই দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শুরু হতে যাচ্ছে শীতকালীন উৎসব পৌষ-পার্বণ। বিয়ে-শাদি, পিকনিক, আনন্দ ভ্রমণ, বার্ষিক সাধারণ সভাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- শুরু হবে শীতে। সাধারণত এসব উৎসবে ব্যাপক খানাপিনার ব্যবস্থা করে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তখন অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে প্রয়োজন হবে মসলা জাতীয় এই পণ্য। ফলে আগামী তিন মাস দেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে পেঁয়াজের। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর কথা ভাবছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী সম্প্রতি সচিবালয়ে জানান, যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন আমদানি করা হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে বিমানে করে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করবে টিসিবি।
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, পুরোদমে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত আমদানি করে বাজার সামাল দেয়া হবে। সামনে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে তাই যোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, বেসরকারীখাতের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এতে সাধারণ ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে উচ্চমূল্যের পেঁয়াজ ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি নিজস্ব উদ্যোগেও মসলা জাতীয় পণ্যটি তুরস্ক থেকে আমদানি করছে। এস আলম গ্রুপের আমদানি করা সব পেঁয়াজ কিনে নিয়েছে টিসিবি। ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রাকসেলে এই পেঁয়াজ বিক্রি করছে সংস্থাটি। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ এখন জাত ও মানভেদে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। পাতা পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ঢাকায় এখনও সেভাবে আসা শুরু হয়নি। ফলে ঢাকায় পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না।
বিমানে পেঁয়াজ আসার পর কেজিতে প্রায় এক শ’ টাকা দাম কমলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। সব ধরনের পেঁয়াজের দাম এখন উর্ধমুখী। নতুন করে দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে সাধারণ ভোক্তা। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। আগে যিনি ৫ কেজি কিনতেন, তিনি এখন ১ কেজি নিচ্ছেন। স্বল্প আয়ের মানুষ নিতান্ত প্রয়োজন না হলে তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করছে না। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজের কারণে দৈনন্দিন ব্যয় বেড়ে গেছে সাধারণ মানুষের। গত দু’মাস ধরে পেঁয়াজ ভোক্তাদের ভোগাচ্ছে। দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় তিন শ’ টাকার ঘরে পৌঁছায় পেঁয়াজের দাম। টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৪০-১৬০, দেশী ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে ২২০ টাকার নিচে কোন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম এত বেশি যে, এখন আর কিনতে ইচ্ছে করে না। অথচ মাছ-মাংস খেতে হলে এই পণ্যটির প্রয়োজন। তিনি বলেন, টিসিবি কমদামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ঠিকই কিন্তু তা সবাই কিনতে পারছে না। আর সবার পক্ষে লাইনে দাঁড়িয়ে ওই পেঁয়াজ কেনাও সম্ভব নয়। তিনি জানান, ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাভাবিক দামে পেঁয়াজ কেনাকাটা করতে হবে।
সারাবছর কত লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে সঠিক হিসেব নিরূপণে সক্ষম হয়নি দুই মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাবছর দেশে প্রায় ২৬-২৮ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১৬-১৮ লাখ টন। বাকি ১০ লাখ টনের ঘাটতি মেটানো হয় আমদানি করে। আমদানির উৎস আবার ভারত। এবার ভারতে উৎপাদন কম হওয়ায় নিজ দেশের প্রয়োজনে রফতানি কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ফলে সঙ্কট তৈরি হয় বাংলাদেশে। এ কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে বিনাসুদের ঋণ ও ভর্তুকি দেয়া হবে।