নিজ পুত্র ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ব্যবসায়ীর

8
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন নগরীর শাহী ঈদগাহ হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী কাদর।

স্টাফ রিপোর্টার :
নিজ বড় পুত্র ও পুত্রবধূর অপকর্ম ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন সিলেটর ব্যবসায়ী নগরীর শাহী ঈদগাস্থ হাজারীবাগ এলাাকার স্থায়ী বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী কাদর। গতকাল শনিবার নগরের একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি সিলেটের একজন পরিচিত ব্যবসায়ী। আমার তিন ছেলের নামে নগরীর ধানসিঁড়ি-৬ আবাসিক এলাকা শাহী ঈদগাহে একটি বাসা রয়েছে। আমার তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও সুনামের সাথে সিলেটে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ছোটো ছেলে আবদুল মোমিন নগরীর জেলারোডস্থ প্রতিষ্ঠান ‘আলী মেশিনারীজ’, বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন ‘আলী এন্ড সন্স’ ও মেজো ছেলে আলী হাসান আমিন ‘আলী কর্পোরেশন’ মহাজনপট্টিস্থ পরিচালনা করে আসছে।’
বড় ছেলের স্ত্রী বিভিন্ন সময় বিনা কারণে সংসারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন আজ থেকে ১৩ বছর আগে বিয়ে করে। হেতিমগঞ্জের তুরবাগ এলাকার রমিজ আলীর মেয়ে পলি আক্তার প্রিয়া আমার পুত্রবধূ। বড় ছেলের বিয়ে পরবর্তী আমার সংসারে শুরু হয় অন্যরকম ষড়যন্ত্র। বউয়ের প্ররোচনায় আমার বড় ছেলে আমি জীবিত থাকা অবস্থায় স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজের নামে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। বড় ছেলে মামুন ও তার স্ত্রী কারণে অকারণে সংসারে বিশৃঙ্খলা চালাতে থাকে। এমনকি আমি এবং আমার স্ত্রীর সাথে টুনকো ঘটনা নিয়ে অশ্লীল কথা ও খারাপ আচরণ করতে থাকে। ২০১৬ সালে আমি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে সংসারের বড় ছেলে হিসেবে ব্যবসার সকল কাগজপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত স্থানে নিরাপদে রাখার জন্য তার হাতে তুলে দেই।
এরপর থেকেই ছেলের নতুন প্রতারণা শুরু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় মামুন আমার অনুপস্থিতির সুযোগে প্রতারণা করে আমার ছোটো ছেলে আবদুল মোমিন পরিচালিত প্রতিষ্ঠান জেল রোডস্থ ‘আলী মেশিনারীজ’ এর সকল কাগজপত্রে নিজের নাম লিখিয়ে নেয়। যদিও ওই দোকানের জমিদার পরবর্তীতে মামুনের প্রতারণার বিষয়টি জেনেছেন। আমি দোকান কোঠাসহ-সমুদয় সম্পত্তি বাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছি-এমন মিথ্যা কথা বলে জমিদার ও ব্যবসায়ীদেও সঙ্গে সকল কাগজপত্রে কৌশলে নিজের নাম লিখিয়ে নেয়। বিষয়টি আমি জানতে পেরে মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি।
২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে মামুন বাসায় তার মাকে গালাগাল, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী যাতে বিষয়টি আমাকে ফোনে জানাতে না পারেন,তাই বাসায় থাকা মোবাইল ফোন সুইস অফ করে খাটের নীচে ফেলে রেখে স্ত্রীসহ স্বেচ্ছায় ওইদিন বাড়ি ছেলে চলে যায়। পরে বাসায় এসে আমার স্ত্রী’র (মামুনের মা) কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ শুনি এবং খাটের নীচ থেকে সুইচ অফ থাকা অবস্থায় মোবাইল সেট উদ্ধার করি। তারপর থেকে মামুন স্ত্রীসহ নগরীর ফরহাদ খাঁ পুলস্থ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে।
তিনি বলেন, সম্পত্তি দখলে ষড়যন্ত্র মামুনের নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় সে আমার সম্পত্তি ওয়াকফ করে দিতে চাপ প্রয়োগ করে। আমি তাতে সায় না দিলে শুরু হয় বিভিন্ন চক্রান্ত। চক্রান্ত অনুযায়ি জেল রোডস্থ ‘আলী এন্ড সন্স’ এর ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পেয়ে প্রথমেই ওই প্রতিষ্ঠান নিজের নামে চালিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এই চেষ্টায়ও বিফল হয়ে পরবর্তীতে শাহী ঈদগাহস্থ তিন ছেলের নামে বন্টনকৃত বাসাটিও বড় ছেলে মামুন নিজের নামে এককভাবে দখল নিতে চক্রান্ত শুরু করে। চক্রান্তের অংশ হিসেবে চলতি মাসের ১ নভেম্বর সোমবার স্ত্রী ও শ^শুরবাড়ির লোকজনসহ বহিরাগত লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে মামুন আমার শাহী ঈদগাহস্থ বন্টনকৃত বাসায় ভাড়াটিয়া এবং মেজো ছেলে আলী হাসান আমিন ও ছোটো ছেলে আবদুল মুমিনের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে বড় ছেলে মামুন পালিয়ে যায় এবং সন্ত্রাসী হামলার দুইদিন পর ৩ নভেম্বর সিলেট কোতয়ালী থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামুনের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বর্তমানে আমার মেজো ছেলে আলী হাসান আমিন (৩৪) এবং মেয়ে আফসানা বেগম শিমু (৩৮) জেল হাজতে রয়েছে। এমনকি এই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে।
উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, মামুনের আচরণে আমি আরও আতঙ্কগ্রস্থ। এর আগে একাধিকবার মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে কোতয়ালী এবং এয়ারপোর্ট থানায় জমা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মামুন আমাকে লাঞ্চিত করে। এখন সে মিথ্যে মামলা ও মাদক দিয়ে আমাকে পুলিশে দেওয়া এবং হত্যা ও গুমেরও ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে।
এামুনের আচরণে এ ব্যভসায়ির জীবন-জীবীকা হুমকীর মুখে জানিয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।