জলদস্যুতার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জলদস্যুদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন-২০১৯’র খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই অনুমোদনের কথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া, জলদস্যুতা, সমুদ্রে সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ ও নৌচলাচল নিরাপত্তা বিঘœকারী বেআইনী কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সহযোগিতা থেকে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
খসড়া আইনানুযায়ী দস্যুতার ক্ষেত্রে কী শাস্তি, জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ার বলেন জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদন্ড হবে। কোন ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাস করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর যেগুলো দস্যুতা করে নেবে তা জব্দ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কোন ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর যদি (জলদস্যুতায়) সহযোগী হয়, সহায়তা দেয় সেক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। ভিন্ন দেশের লোকও যদি আমাদের জলসীমায় এসে এসব অপরাধ করে তিনিও একই শাস্তি পাবেন।
এই আইনে বাংলাদেশের জলসীমা দিয়ে চলাচলের সময় বিদেশী জাহাজে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধী গ্রেফতার ও তদন্ত পরিচালনার বিধান থাকছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এ্যান্ড মেরিটাইম এ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (আনক্লোজ-১৯৮২)’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োাজনীয় পদক্ষেপ নিতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘আনক্লোজ-১৯৮২’, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত দুটি মামলা রায়(মিয়ানমার ও ভারত) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌ চলাচলের নিরাপত্তা বিরোধী অবৈধ কর্মকান্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্্িরক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত, দূষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই অর্থনীতি উন্নয়ন ও সামাজকি উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন-২০১৯’র একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করে। পরে খসড়াটি নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়।