অবশেষে আন্তর্জাতিক আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জেনোসাইড প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলাটি করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যে জেনোসাইডের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ এবং সম্প্রদায়গুলোকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়। এ ছাড়া হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেও (আইসিসি) পূর্ণ তদন্ত শুরু করার জন্য একজন কৌঁসুলির আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও আইসিজের সদস্য এবং জেনোসাইড প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। কাজেই এই আদালতের সিদ্ধান্ত মানার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী যে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে, এটিকে এর আগে অনেক বিশ্বনেতাই গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘মিয়ানমারে যেভাবে জাতিগত নিধন, গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও শিশুহত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ একই কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে থাকা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থাকা অবরোধ আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক কথায় সারা দুনিয়া রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের বর্বর হত্যাযজ্ঞের নিন্দায় মুখর। এ ক্ষেত্রে আইসিজে মামলাটি গ্রহণ করলে সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে তা হবে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একই সঙ্গে এটি হবে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কারণ আইসিজে সাধারণত জেনোসাইড-সংক্রান্ত অভিযোগ খুব একটা আমলে নেয় না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও মামলা দায়েরের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগামী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে ২০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছে। এই ২০ দফার মধ্যে রয়েছে—মিয়ানমারের রাখাইন, কাচিন, শানসহ বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতাসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক, স্বাধীন, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান এবং জাতিসংঘকে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তকাঠামোকে সহযোগিতার আহ্বান।
আমরা চাই, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত বর্বর হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু বিচার হোক। একই সঙ্গে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্বসম্প্রদায় আরো উদ্যোগী ভূমিকা নিক এবং রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে দ্রুত পুনর্বাসিত করা হোক।