কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে গত বছর ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০ জন। এর আগের বছরের তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে আট ভাগের বেশি। দুর্ঘটনার জন্য ১২ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনের পক্ষ থেকে। জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নৌ-সড়ক-রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুর্ঘটনার দিক থেকে তিন সংগঠনের পরিসংখ্যান ছাপিয়ে শীর্ষ অবস্থানে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল আগের বছর ২০১৮ সালের প্রায় সমান। কিন্তু ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর প্রাণহানির সংখ্যা ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার মানুষদের মধ্যে ৯৮৯ জন বিভিন্ন যানবাহনের চালক, ৮৪৪ জন পরিবহন শ্রমিক ও ৮০৯ শিক্ষার্থী, ১১৫ শিক্ষক, ২১৬ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৯৪ নারী, ৫৪৩ শিশু, ৩৬ সাংবাদিক, ২৬ চিকিৎসক, ১৬ আইনজীবী ও প্রকৌশলী এবং ১৫৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
গত বছর দুর্ঘটনার শিকার যানবাহনের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল বাস, ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ও ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মোটরসাইকেল। মোজাম্মেল হক দাবি করেন, মোটরসাইকেল চলাচলে কঠোর নজরদারির কারণে দুর্ঘটনার হার আগের বছরের তুলনায় গত বছর ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। তিনি আরও বলেন, ৮০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোন মামলা হয় না। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজা হয় মাত্র ১ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার ১২টি কারণ এবং দুর্ঘটনা রোধে ১২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে সড়ক নিরাপত্তাকে দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক, ড্রাইভারস ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূরনবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি মোঃ তাওহিদুল হক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর রেলপথে ৪৮২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত, ৭০৬ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ২০৩টি দুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত, ২৮২ জন আহত এবং ৩৭৫ জন নিখোঁজ হয়। সড়ক, রেল, নৌপথে সর্বমোট ৬ হাজার ২০১টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত এবং ১৪ হাজার ৩১৮ জন আহত হয়েছে।
সংঘটিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৭ হাজার ৩৫৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বাস, ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫ দশমিক ২২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২১ দশমিক ৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
২০১৮ সালের তুলনায় বিগত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত যানবাহনের ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক, ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা, ১ দশমিক ১৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাসে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের ফলে যানবাহনের গতি বাড়ায় জাতীয় মহাসড়কে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রেলক্রসিংয়ে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও, আঞ্চলিক মহাসড়কে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, ফিডার রোডে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে।
সমিতির পর্যবেক্ষণে, ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ১৫ জুন এদিনে ৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ১২১ জন আহত হয়। এ বছর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ১৪ জুলাই এদিনে ২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়। এ বছর একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় গত ৫ জুন এইদিনে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত ৯৩ জন আহত হয়। একই বছর সবচেয়ে বেশি আহত হয় ১৫ আগষ্ট এইদিনে ২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ২২১ জন আহত।