আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…

36

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাতৃভাষা আন্দোলন নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা আর আলতাফ মাহমুদের সুরের কালজয়ী সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’ কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে বেদনা জাগায়। অমর এই গান বাঙালি হৃদয়ের বিরাট অংশ জুড়ে জায়গা করে নিয়েছে। গানের ভাষায়ই কোটি কোটি বাঙালির বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে। মনে পড়ে সেদিনের বর্বর সেই পাকিস্তানী শোষকদের কথা অত্যাচারের কথা। মানুষের মানসপটে ভেসে ওঠে ভাইয়ের রক্ত, ছেলেহারা মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখ। যুগ যুগ ধরে বাঙালির হৃদয়ে ভাষা আন্দোলন আর একুশের চেতনা জাগ্রত করে রেখেছে অমর একুশের এই গান। মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছিলেন। ইতিহাসে যা এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ওদের জন্যই আজ ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ভাষার দাবিতে সেদিন ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। দৃপ্ত শ্লোগানে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহমেদ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ হন তিনি, একুশের প্রথম শহীদ। নুরুল আমিনের ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নেমে দৃপ্ত শ্লোগানে বরকতও ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র বরকত শহীদ হন। মিছিলে মিছিলে তখন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। উত্তপ্ত ঢাকার নবাবপুর রোডে ৮ বছরের শিশু তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অহিউল্লাহও শরিক হয়েছিলেন মায়ের ভাষার দাবিতে, পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি। পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন হাইকোর্টের হিসাবরক্ষণ শাখার কেরানী শফিউর রহমান। ছাত্র-জনতার সেøাগানে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে রাজপথ কেঁপে ওঠে। এক সময় পাক শাসকগোষ্ঠীর হুকুমে তাবেদার পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। হাঁটু আর কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আব্দুল জব্বার।
মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে বাঙালি যখন একজোট তখন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন তরুণ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা দিয়ে নেমে আসে রাজপথে। পাকিস্তান গণপরিষদ ঘেরাওয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকে শুরু হলেও বেশিদূর এগোতে পারেনি। মিছিলের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। শহীদ হন রফিক শফিক বরকত জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। তখনই রচিত হলো মাতৃভাষার অমর কাব্যগাথা। ’৪৮ সালে শুরু হয়ে রক্তাক্ত বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারিতে উত্তাল হলো ছাত্র-জনতার মিছিল। সবার আগে মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন।