গ্রাহকদের ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের মামলায় এমএলএম কোম্পানী ম্যাক্সিমের ২১ কর্মকর্তার ১০ বছরের কারাদন্ড

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রাহকের তিনশ কোটি টাকা পাচারে দুদকের দায়ের করা মামলায় এমএলএম কোম্পানি ম্যাক্সিম ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মফিজুল হকসহ ২১ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার এক নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দা হোসনে আরা এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- ম্যাক্সিম ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পরিচালক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, খায়রুল বাশার সজল, আবদুল হান্নান সরকার, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, এইচএম আমিরুল ইসলাম, মো. ওলিয়ার রহমান, ফজলুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান (তপন), মোহাম্মদ সোলাইমান সরোয়ার, হারুন আর রশিদ, শেখ আবদুল্লাহ আল মেহেদী, সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম, মনোয়ার হোসেন, এমএ সাদী, আসলাম হোসাইন, মেহেদী হাসান মোজাফ্ফর, ইমতিয়াজ হোসেন কাওসার ও মিজানুর রহমান।
রায়ে দশ বছর করে কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের মানিলন্ডারিং কৃত তিনশ কোটি ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৯ টাকার দ্বিগুণ ৬০৩ কোটি ৮৬ হাজার ২৫ হাজার ৪৭৮ টাকা অর্থদণ্ড করেছে আদাল। যা প্রত্যেক আসামি সমভাবে পরিশোধ করবেন বলে রায়ে উল্লেখ করেছে আদালত। সে হিসেবে প্রত্যেক আসামিকে ২৮ কোটি ৬৬ লাখ এক হাজার ২১৩ টাকা দিতে হবে। যা পাবে রাষ্ট্র।
রায়ে অর্থদণ্ডের টাকা আসামিদের ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ব্যর্থতায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬(১) ধারা অনুযায়ী জেলা কালেক্টর আসামির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পক্তি বিক্রয়ের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা করবেন।
এছাড়া রায়ে আদালত দণ্ডিত আসামিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পক্তি মানিলন্ডারিং আইনের ৪(৩) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তেরও নির্দেশ দিয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আসামি হাবিবুর রহমান, মেহেদী হাসান মোজাফ্ফর, ইমতিয়াজ হোসেন কাওসার ও এইচএম আমিরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আর পলাতক ১৭ আসামির বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করে আদালত।
মামলা সম্পর্কে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল হাসান জানান, ২০১৪ সালের ১৯ মে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় দ-িত ২১ জন ২২ জন আসামি ছিলেন। অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে ম্যাক্সিম ফাইন্যান্সের ১১৩টি শাখার মাধ্যমে ১৮ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় ৩০৪ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে পাচার করেন বলে অভিযোগ করে দুদকের উপ-পরিচালক নূর হোসেন খান এ মামলা করেন। মামলার তদন্তাধীন অবস্থায় পরিচালক আব্দুল খালেক এ মারা যায়। তাই মামলাটি তদন্তের পর দণ্ডিত ২১ জনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৪ মে ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তদন্তে ৩০৪ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা থেকে তিনশ কোটি ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৯ টাকার পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা ও আদায়কারীকে মাসে ৫০০ টাকা করে কমিশন দেওয়া হয়। এভাবে বেশি মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১৮ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০৪ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে আসামিরা উক্ত অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে পাচার করেন। ম্যাক্সিম ফাইন্যান্সের ১১৩টি শাখা থাকলেও সমবায় অধিদপ্তর থেকে অনুমতি ছিল মাত্র ২৫টি শাখার। বাকি ৯৮টি শাখার অনুমোদন ছিল না।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটির বিচারকাজ চলাকালে আদালতে চার্জশিটভুক্ত ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।