আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে বোরো ফসলের কিছু ক্ষয়-ক্ষতি হলেও দেশে খাদ্য সংকট হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন বাজারের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্যই সরকার ধান চাল কেনেন। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দেয়ার জন্যই ধান চাল কেনা। তাই কৃষক যাতে সম্মানের সাথে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোন কৃষক হয়রানী কিংবা অসম্মান হন তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য বর্তমান সরকার সব কিছুই করছে। ধান কাটার আগেই কৃষকদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। ১৪ ভাগ মইশচারাইজ নিয়ে কোনও কৃষক গুদামে যান আর তার ধান না কেনেন তাহলে সেই খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কে জবাবদিহি করতে হবে। কৃষকদের কথা চিন্তা করেই এবার এপ্রিল মাস থেকেই ধান চাল কেনা শুরু করা হয়েছে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান-২৭ টাকা কেজি অর্থাৎ এক মন এক হাজার আটশো টাকা দর পড়বে। সরকারের খাদ্য ভান্ডার মজবুত আছে ভারতের সাথে ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ মেট্রিক টন গম আমদানীর চুক্তি করা হয়েছে। ১৫ মে রবিবার বিকাল ৫ টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন,খাদ্য সচিব বেগম নাজমানারা খানুম, সিলেট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ মাইনুদ্দিন, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক অসীম চন্দ্র বনিক, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, এন এস আই যুগ্ম পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ আহমদ হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নকীব সাঈদ সাইফুল, পিপি এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু, জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু প্রমুখ।
মন্ত্রী বলেন, দেশে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে অনেক বেশি। এ থেকে আমাদের ধান-চালের শক্তিশালী একটি মজুত গড়ে উঠবে। এছাড়াও গত আউশ ও আমন ধানেরও আমাদের প্রচুর মজুত রয়েছে। বৃষ্টির কারণে আগামী আউশ ফসলও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দেশে কোনোভাবেই খাদ্যসংকট তৈরি হবে না।
সুনামগঞ্জ জেলায় বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিক,খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা,ডিলার,মিলার ও গুদাম কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত এই মত বিনিময় সভায় মন্ত্রী বলেন,রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর গম আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। তবে শুক্রবার থেকে দেশটি গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। যদিও সরকারিভাবে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তারা রপ্তানি বন্ধ করলেও এতে বাংলাদেশের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারত গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত ১ বছর থেকে আমরা বিদেশ থেকে চাল আমদানি করিনি। আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত ধান দিয়েই চালের চাহিদা মিটছে। তবে গম আমাদের দেশে হয় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গম আমদানি করা হতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু এই দু’দেশের যুদ্ধের সময়ে আমরা সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করেছি। পরবর্তীতে যা দরকার তাও ভারত থেকে আমদানি করা হবে।
সম্প্রতি পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যে সরকার পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন,ভবিষ্যতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। সিলেটে ধান চাল সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সাইলো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হবে।
ধানের সরকারি দামের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করে এবং তাদের কাছ থেকে ঘোষণা দিয়ে দাম নির্ধারণ করে ধান কেনে। কৃষকরা যাতে বাজারে অন্যের কাছে ধান বিক্রি করে না ঠকে তাই এমনটি করা হয়। এবার ধানের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আর বাড়ানো হবে না।
খাদ্যমস্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকরা সরাসরি ন্যায্য মূল্যে ধান চাল গুদামে দিতে পারবেন। এতে কোন ফরিয়া ও দালাল ধরতে হবে না। সিন্ডিকেটের মাধ্যম ধান চাল দেয়া যাবে না। তিনি বলেন চলতি বছর সরকারীভাবে ২৮ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর এই জেলায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা হয়েছে সেই আলোকেই কৃষকদের ন্যায্য মূল্যে ধান গুদামে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। চলতি বছর এ জেলায় ৩৪ হাজার কৃষকের তালিকা করা হয়েছে যারা সরাসরি গুদামে ধান ও চাল বিক্রয় করতে পারবেন। ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তাদের মূল্য পরিশোধ করা হবে।