বছর দুয়েক আগে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি শঙ্কিত করে তোলে মানুষকে। নানা তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে গণমাধ্যমে। র্যাব জানিয়েছিল, ওই হত্যা মামলার সূত্রে যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা উত্তরার ডিসকো বয়েজ এবং বিগ বস কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আরো কিছু কিশোর গ্যাংয়ের কথাও জানা যায় র্যাব ও পুলিশের তদন্ত থেকে। গ্যাংয়ের কিশোররা মাদক, ইভ টিজিং, অবৈধ অস্ত্রবহন প্রভৃতি অপরাধে জড়িত। সাধারণত স্কুল ড্রপ-আউট ছেলেরা কিশোর গ্যাং তৈরির উদ্যোগ নেয় এবং স্থানীয় কিশোরদের অনেককে বাধ্য করে সদস্য হতে। উত্তরায় কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বেশ প্রকট, ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও গ্যাং রয়েছে ১৫টির বেশি। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের অন্যান্য এলাকায়ও এ সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। বিষয়টি বেশ শঙ্কাজনক।
রংপুর নগরবাসী কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও বস্তিতে গড়ে উঠছে কিশোর অপরাধীচক্র। এই কিশোরদের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত। নেশার কারণে তারা চুরি, ছিনতাই, ইভ টিজিং, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৩০টির বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। বেশির ভাগ সদস্যই নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মাদকাসক্ত। গত মাসে পূজায় ইভ টিজিংকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের একটি গ্যাংয়ের প্রধানসহ ১১ সদস্যকে আটক করে র্যাব। কিশোর গ্যাং উপসর্গ আরো অনেক জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে। এসব গ্যাংয়ের হাতে খুনের বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে। একেক জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তির কারণ একেক রকম। তবে পরিণতি প্রায় এক। একপর্যায়ে তারা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। অস্ত্র ও মাদকের বাহকে পরিণত হয়।
কিশোরদের গ্যাং সংস্কৃতিতে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কী কারণ? সমাজবিজ্ঞানীদের কারো মতে, মূলত দুটি কারণে কিশোররা এ সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে। এক. মাদক ও অস্ত্রের প্রভাব তাদের আকৃষ্ট করছে। দুই. শিশু-কিশোররা এখন পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। এসবের বাইরে আকাশ-সংস্কৃতি এবং ভার্চুয়াল পরিসরও বড় কারণ—এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। পুলিশ ইদানীং তৎপর হয়েছে বটে, তবে তাদের কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ নয়। নির্বিচার গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। ঢালাওভাবে আটকের ঘটনার সমালোচনাও হচ্ছে।
কিংশোর গ্যাং সংস্কৃতির অবসান বাঞ্ছনীয়। তার আগে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে হবে। অতঃপর কর্মসূচি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি পারিবারিক নজরদারি জরুরি। শিক্ষক, অভিভাবক ও সুধীসমাজের সমন্বয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালাতে হবে। মা-বাবাকে কিশোরদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে।