কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ৩ নভেম্বর জাতির ইতিহাসের কলঙ্কময় একটি কালো দিন- জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশবিরোধী ঘাতকচক্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতায় একই বছরে ২য় হত্যাকান্ড হলো ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা। আদর্শ ও চেতনায় অবিচল বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে হত্যার মাধ্যমে ঘাতকচক্র সেদিন মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল চেতনা উপড়ে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।
বর্বরোচিত ঘটনার সাক্ষী এ দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটিকে আজ যথাযথ শ্রদ্ধা ও মর্যাদায় পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসমূহ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। শোকাবহে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে দিনটি। দিবসটি স্মরণে সকাল ৬টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের প্রতিটি কার্যালয়ে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দলীয় নেতাকর্মী ও প্রজন্মজনেরা কালোব্যাজ ধারণ করবেন, করা হবে কালো পতাকা উত্তোলন। বেদনাবিধুর এ দিনে সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। সকাল আটটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগষ্টের শহিদ ও একইস্থানে জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই কর্মসূচি পালন করা হবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের সমাধিস্থলেও। এদিকে আজ বিকাল তিনটায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় চার নেতা স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান করবে আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে দেশের এই চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৩ নভেম্বর তাদেরকে প্রথমে গুলি করে এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তৎকালীন প্রত্যক্ষ ক্ষমতাসীন চক্র ও নেপথ্যে থাকা তাদের দোসররা। এই চার জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তারই নির্দেশিত পথে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ‘৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। এএইচএম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে এলে জাতীয় চার নেতা তার প্রতি পুনঃআনুগত্য প্রকাশ করে রাষ্ট্র ও সরকারের যাবতীয় সিদ্ধান্তের ভার তার ওপরই ন্যস্ত করেন।
এদিকে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন শাখা, সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণকে যথাযথ মর্যাদায় জেলহত্যা দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।