রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন

13

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানে প্রতিদিনই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। অনেকেই ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পেয়ে কুঁড়েঘর থেকে এক লাফে রাজপ্রাসাদে উঠে এসেছে।
জানা যায়, কৃষক লীগ নেতা নজরুল ইসলাম বিশ্বাস কিভাবে বিশ্বাস বিল্ডার্সের মালিক হলেন, কিভাবে কুঁড়েঘর থেকে হ্যালিপ্যাডসংবলিত রাজপ্রাসাদ বানালেন, কিভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। এদিকে নজরুল ইসলাম বিশ্বাসের বাড়ি ঝিনাইদহে। তাঁর বাবা আবদুর রশিদ বিশ্বাস ১৯৭৩ সালে ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং ছয় বছরের সাজা হয়। সে সময় তাঁদের একটি ভিটে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পরিবারের সদস্যদের দিনমজুরিও করতে হতো। জেল থেকে বেরিয়ে আবদুর রশিদ বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। সেই থেকে পুরো পরিবারই বিএনপি ঘরানার। নজরুল ইসলামের উত্থান ত্বরান্বিত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে কৃষক লীগের সহসভাপতির পদটি বাগিয়ে নেন। কিন্তু শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ১১১ জনের কমিটিতে নজরুল ইসলাম বা দুলাল বিশ্বাসের নাম নেই। সভাপতি এর বাইরে কাউকে সহসভাপতির দায়িত্ব দিলেও তা বৈধ নয়। নজরুল ইসলাম বিশ্বাস নিজেকে কৃষক লীগ নেতা বলে পরিচয় দিলেও তাঁর দপ্তরে জামায়াতের লোকজনেরই বেশি আনাগোনা ছিল। এখন আওয়ামী লীগের অনেকেই তাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলে টোকা দিয়ে ময়লা ফেলার মতো দায় এড়াতে চান। কিন্তু এই অনুপ্রবেশকারীরা এত দিন আওয়ামী রাজনীতির পরিচয় দিয়ে এত সুযোগ-সুবিধা নিলেন কী করে তার জবাব খুঁজতে হবে। তাঁদের দলে নিয়ে কারা লাভবান হয়েছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করতে হবে।
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে রাজনীতি সম্পর্কেই মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। এমন শুদ্ধি অভিযান আরো আগেই শুরু করা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তা হয়নি। বর্তমান শুদ্ধি অভিযান দীর্ঘদিনের জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন। একে এগিয়ে নিতে হবে এবং আরো জোরদার করতে হবে।