বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। মধ্যবিত্তের সংখ্যা তিন কোটির বেশি। অভ্যন্তরীণ বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা নানা বিষয়ে দ্রুত দক্ষতা অর্জন করছে। দেশে ব্যাপক হারে শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠছে। বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। পণ্য ও সেবা রপ্তানিতে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। চলতি অর্থবছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চারটি সমুদ্রবন্দর শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশীদেরও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতি, ধর্মীয় সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি, উদার গণতন্ত্র এবং আধুনিক মন-মানসিকতা বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশই হতে পারে এই অঞ্চলের ‘ইকোনমিক হাব’ বা অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম আয়োজিত ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এভাবেই তুলে ধরেন নিজের দেশকে।
প্রধানমন্ত্রী চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি পৌঁছান। এই সফরে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। দুই দেশে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটাই হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। জানা গেছে, এই বৈঠকে ১০টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সন্ত্রাস রোধ, স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ ১১টি বিষয় এই বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই প্রধানমন্ত্রী তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘টেগোর পিস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে গতকাল তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আগত প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং ভারতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
গত ১০ বছরে ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমাসংক্রান্ত বিরোধ নিরসন, সীমান্ত সমস্যার সমাধানসহ উল্লেখযোগ্য অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যে শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হয়েছে। আমরা আশা করি, একই ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যকার অন্য অমীমাংসিত বিষয়গুলোরও দ্রুত সমাধান হবে। আমরা চাই, পারস্পরিক স্বার্থে দুই দেশের মধ্যকার এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো এগিয়ে যাক।