গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর আসে। সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাশাপাশি সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলে বিশ্বের আরো অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে। এরপর সেই অঘোষিত লকডাউন বা ছুটির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়। মানুষকে ঘরে রাখতে সরকারঘোষিত ছুটি এখনো চলছে, দোকানপাট আর মসজিদের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ শিথিল হলেও গণপরিবহনের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল; কিন্তু রাস্তার চিত্র ভিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণ রোধ করা যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন সংক্রমণের রেখচিত্র নিম্নগামী তখন বাংলাদেশে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মারা গেছে ১৪ জন। সংক্রমিত বলে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪১ জন। পরীক্ষার সংখ্যাবৃদ্ধির পাশাপাশি এখন বাড়ছে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ২৮ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এরপর দুই দিন ২৯ ও ৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় কার্যত ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি থাকছে দেশে। তবে এ জন্য ১৫টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
কিন্তু এই ছুটি বাড়িয়ে লাভ কী? এর আগেও তো শর্ত দেওয়া হয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি ও সাধারণ ছুটির নিয়ম কোনোটাই কি কঠোরভাবে মানা হয়েছে? বরং দেখানো হয়েছে চরম শৈথিল্য। মানুষ যদি নিষেধ অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শপিং মল বা দোকানপাটে ঈদের কেনাকাটা করতে যায়, তাহলে তো এই সাধারণ ছুটি কোনো কাজে আসবে না। কাজেই শুধু ছুটি বাড়ানো নয়, মানুষের অকারণে ঘরের বাইরে আসা বন্ধ করতে হবে। এখানে মনে রাখা দরকার, সরকার বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও সাধারণ ছুটি দিয়েছে শুধু নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায়। কিন্তু নাগরিকরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে না পারলে তার ভয়াবহ ফলও তো ভোগ করতে হবে। দেশের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে কিছুদিনের জন্য কঠোর লকডাউন, দরকার হলে কারফিউ দেওয়া যেতে পারে।
দেশের নাগরিকরা সচেতন হবে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আরো কঠোর হতে হবে।