অসময়ে বন্যা

44

এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হয়েছে কম; বিল-বাঁওড়ে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা ছিল তা হয়নি। তার পরও দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা হয়েছে মৌসুমের গোড়ার দিকে, মূলত উজানের ঢলের কারণে। এখন আবার কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে; অসময়ের বৃষ্টিপাতে। বর্ষা মৌসুমের শেষে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকায় স্বল্পস্থায়ী বন্যার পূর্বাভাস ছিল। সেটিই ঘটছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের সব গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়ায় পদ্মায় পানি বাড়ছে। দেশের অভ্যন্তরে টানা বৃষ্টিপাতও বন্যা পরিস্থিতির বড় কারণ।
এরই মধ্যে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নাটোর অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কোথাও কোথাও বিপত্সীমা অতিক্রম করেছে। নদীভাঙনও শুরু হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, টানা বৃষ্টির কারণে সুরমা ও কুশিয়ারা ছাড়া দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। ৯৩টি নদী-পয়েন্টের ৭৪টিতেই পানি বেড়েছে। চারটি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপত্সীমা ছাড়িয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাষ্য অনুযায়ী, বৃষ্টিই বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির কারণ। তবে এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হবে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও রংপুরের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিও হতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে, ১২০ মিলিমিটার।
উজানের ঢল আর বৃষ্টিতে পদ্মা অববাহিকায় প্রতিদিন ডুবছে ফসলি জমি। অনেকে আশ্রয়হীন হয়েছে। রাজশাহী শহর, গোদাগাড়ী সদর, বাঘা-চারঘাট সদরে এসে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। বাঘারচরে প্রায় দুই হাজার মানুষ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি। নাটোরের লালপুর উপজেলার ৯টি চরের হাজারের বেশি বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখন পানিবন্দি।
অসময়ের বন্যায় ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। কিছু মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। এ বন্যা স্বল্পস্থায়ী হবে বলা হলেও এর অভিঘাত যেন বিপত্তিকর না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নজর রাখতে হবে। সবজি ও শস্যের বাজারেও দৃষ্টি রাখতে হবে। দুর্গত দশায় যারা পড়েছে দ্রুত তাদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হোক।