কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারত ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ায় নদ-নদীতে পানির প্রবাহ বেড়েছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির পানিও। এর ফলে দেশের নদ-নদীর ৪ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন-চারদিন এই পানি আরও বাড়বে। এতে পদ্মার তীরবর্তী জেলা শহরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সবাইকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, চার পয়েন্টের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে মেঘনায়। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, গোয়ালন্দের পদ্মায় পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, কামারখালীর গড়াই নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের গংগা ৮ সেন্টিমিটার এবং মেঘনা ব্রিজের কাছে মেঘনায় ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গঙ্গা-পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে গঙ্গা-পদ্মা ও গড়াই নদীর আশপাশের এলাকা পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে পারে।
এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশের ছয়টি পয়েন্টে নদীর পানি বাড়ছে। আগামী তিন-চার দিন পানি আরও বাড়বে। এরপর আবার কমতে শুরু করবে।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা অববাহিকায় যেসব জেলা আছে, সেগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যেন মাঠপর্যায়ের বাঁধগুলো সুরক্ষিত থাকে, ভেঙে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা যায়। এছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে সেখানে ত্রাণ দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
এদিকে ভারতেও বৃষ্টিপাতের কারণে বাড়ছে ফারাক্কার পানি। এ পানি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে, ৯০ মিলিমিটার।
এ বিষয়ে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারাজের কাজ হচ্ছে নদীকে কানায় কানায় ভর্তি রাখা। এ বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে কিছু পানি কমা শুরু হয়েছিল। পানি কমা শুরু করায় কিছু গেট বন্ধ করা হয়। আবার যখন পানি বাড়তে শুরু করেছে, তখন সব গেট সব খুলে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি, কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে ১২২ মিলিমিটার। এছাড়া, ঢাকা বিভাগের মধ্যে মাদারীপুরে সর্বোচ্চ ৬৩ মিলিমিটার, ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় ৬, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে মাইজদীকোর্টে ৬৩, রংপুরের রাজারহাটে ৪, খুলনায় ২৪ এবং বরিশালের খেপুপাড়ায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জেলা-উপজেলার সব পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পদ্মা অববাহিকার জেলাগুলোসহ দেশের সব জেলায় বন্যা বা ভাঙন পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।