কাজিরবাজার ডেস্ক :
পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পাশাপাশি অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বুধবার বলেছেন, বেশি লাভ করলেও ৬০ টাকার বেশি দাম হওয়া উচিত নয়। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৯৮৩ টনের মতো পেঁয়াজ এসেছে। এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় বুধবার পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ১০ টাকা কমেছে। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাড়তি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। আকস্মিক দাম বাড়ার কারণে বাজারে ক্রেতা কমে গেছে। বিক্রেতারাও বলছেন, তাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিকে পেঁয়াজ আমদানির অর্থায়নে সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, পেঁয়াজের দামে লাগাম টানতে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে সেখানে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ৭৫-৮০ টাকায় নেমেছে। যা একদিন আগেও ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বরিশালসহ কয়েকটি জেলায়। এতে কিছুটা সুফলও দেখা গেছে বাজারগুলোতে। গত কয়েকদিনের তুলনায় বুধবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি কমেছে অন্তত ১০ টাকা। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাড়তি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। আকস্মিক দাম বাড়ার কারণে বাজারে ক্রেতা কমে গেছে। বিক্রেতারাও বলছেন, তাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মোঃ দুলাল খান বলেন, মঙ্গলবার ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, বুধবার বিক্রি করেছি ৯০ টাকায়। আগের দিনে সর্বনিম্ন ১৫ বস্তা (প্রতি বস্তা ৭০ থেকে ৭২ কেজি) বিক্রি করতাম। আজকে এখন পর্যন্ত এক বস্তাও বিক্রি করতে পারিনি।’ নজরুল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘রবি ও সোমবারের দিকে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এখন তো দাম কমে গেছে।’ ৯০ টাকা কেজিতে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছি। আগে যে পেঁয়াজ কিনেছিলাম এখন তা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও বেচাকেনা নেই। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ বস্তা (প্রতি বস্তা ৭০ বা ৭২ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আগে সেখানে ১৫ থেকে ২০ বস্তা বিক্রি করতাম।’ শহিদুল নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকায় উঠেছিল, এখন তা ৮৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়াতে বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।’
সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, লাগামহীন হয়ে ওঠায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ৯৮৩ টনের মতো পেঁয়াজ এসেছে। ফলে কাল বা পরশুর মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৬০-৭০ টাকায় চলে আসবে। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ একথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। আমরা একটা কস্টিং পেয়েছি, অনেক কিছু ওয়েস্ট হতে পারে, প্লাস প্রফিট ধরে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।’
পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা করতে হবে যাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। তিনি আরও বলেন, সব ভোক্তা যদি একসঙ্গে কিছুদিন পেঁয়াজ না কেনে তাহলে এর একটা প্রভাব বাজারে পড়ে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় এর প্রভাব পড়তে দেরি হওয়ার কথা থাকলেও দেরি হয়নি। দ্রুতই দাম বেড়েছে। তবে দাম কমানোর সুযোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘পেঁয়াজ ভারত থেকেই বেশি আসত। ভারতেও দাম বেশি বর্তমানে। আজ সকালে টেকনাফ বন্দরে ৪৮৩ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে। আরও ৪০০ থেকে ৫০০ টন ঢুকবে।’ পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে এবং বেশি লাভ করলে ৬০ টাকার বেশি দাম হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
দেশী ও আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ পৃথক করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুই রকম নির্ধারণ করা তো যাবে না, এক রকমই করতে হবে। হিসাব করে আলোচনা করতে হবে কী পরিমাণ দাম ফিক্সড আপ করে দিলে ভাল হয়।’
তিনি বলেন, ‘সবসময় বিদেশী পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে, ৫-৭ টাকা বেশি থাকে। আমাদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর কথা নয়, সেটা তো দেশেই থাকে। সব বিবেচনা করে একটি পয়েন্টে আসতে চাই, যাতে এ দামে সবাই নিতে পারে।’
পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ দ্রুত আনা যায়। ল্যান্ডেড কস্ট ৪২-৪৩ টাকা, ঢাকায় আনার খরচ লাভ নিয়ে দাম ৫৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। তারপরও বাজারে তো দাম বেশি। আমরা চেষ্টা করছি দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, বেশকিছু বাজারে জরিমানা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আশা করছি দাম কমবে।’
দাম বাড়ার কারসাজিতে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে, বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে তারা। আমরা নিজেরাও ৪৫ টাকা করে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছি। দাম বেড়ে এ পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয়। আজ-কালকের মধ্যে এর প্রভাব বাজারে পড়বে।
তিনি বলেন, কার কাছে কী পরিমাণ স্টোর আছে তা দেখছি এবং পেঁয়াজ কিন্তু বেশি দিন রাখতে পারবে তাও না। টিসিবির কাছে কত স্টক আছে তার কিন্তু ভর্তুকি দিয়ে দেয়, ৬০ টাকায় কিনে তারা বিক্রি করছে যাতে সাধারণ মানুষ সুবিধা পায়। টিসিবির বিক্রি বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে টিসিবির সঙ্গে কথা বলা হবে। দেশে উৎপাদিত হলেও ৭-৮ লাখ টন ঘাটতি থাকে। ভারতে এখন দাম ৯০ রুপীর মতো। ভাগ্য ভালো যে মিয়ানমার থেকে কম দামে পাচ্ছি।
টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য প্রচুর এলসি ওপেন হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে আসায় খুব পজিটিভ হয়েছে। ভারত থেকে রফতানি বন্ধ হবে চিন্তাও করিনি, এটার ওপর তো কারও হাত নেই। আমাদের স্বাবলম্বী হতে হলে ৭-৮ লাখ টন বেশি উৎপাদন করতে হবে। ভারত রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।