ডেঙ্গু এখনো এক আতঙ্কের নাম। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বর তো বটেই, অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশ ভালোভাবেই থাকবে। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ে নানা মহলে হৈচৈ কম হয়নি। এখনো হচ্ছে। মশা মারার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর ওষুধ আনা হয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো বাকি সব কাজ প্রায় বাদ দিয়ে মশা মারতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছেন। জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১০ লাখের বেশি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আরো কত কী! কিন্তু ডেঙ্গুর মশা এডিসের দাপট কি কমছে?
এ বছর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই অন্যান্য বছরের চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বড় ভূমিকা রাখছে। এমন আরো অনেক বিপদ আসতে পারে সামনের বছরগুলোতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানি ও কীটপতঙ্গবাহী অনেক রোগই মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে, যদি না পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল এবং আছে। শহরাঞ্চলে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশা। এ মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে নয়, স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাড়ির আশপাশে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত জিনিস এবং ঘরের ভেতরে জমিয়ে রাখা পানিতেই এদের বংশবিস্তার বেশি হতে দেখা যায়। এ জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার শহরবাসীর সচেতনতা। ডেঙ্গু নিয়ে এত হৈচৈয়ের পরও সিটি করপোরেশনগুলোর অভিযানে ৫ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। ৫০ শতাংশ বাড়িতে মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া গেছে। অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। সাতজনকে জেলও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বহু মানুষ অসচেতনই রয়ে গেছে। গত শুক্রবারও রাজধানীর ৯০টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। ঘরের ভেতরে ঢুকে সিটি করপোরেশন কর্মীদের পক্ষে লার্ভানাশক ছিটানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
এ বছর সিটি করপোরেশন মশা নিধন অভিযানে নামতে দেরি করেছে। তদুপরি তাদের ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতাও কম ছিল। এ নিয়ে তাদের ব্যাপক সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমরা আশা করি, সিটি করপোরেশনগুলো এর পর থেকে সারা বছরই মশা নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। শুধু এডিসই নয়, অন্যান্য মশাও অত্যন্ত ক্ষতিকর। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র পরিত্যক্ত জিনিসপত্র না ফেলা ও নিজ ঘরে মশার বংশবিস্তার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।