১৯৯৭ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন বা আইওআরএ নামের একটি আন্ত সরকারি সংস্থা। ভারত মহাসাগর এমন এক বাণিজ্য রুট, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম কনটেইনার জাহাজের অর্ধেক চলাচল করে। বিশ্বের বাল্ক কার্গো ট্রাফিকের এক-তৃতীয়াংশ এবং বিশ্বের তেলের চালানের দুই-তৃতীয়াংশ যায় এই পথে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহনব্যবস্থায় ভারত মহাসাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন। আবার এই সমুদ্রসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২.৭ বিলিয়ন লোকের বাস। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ভাষা, ধর্ম ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। এ এলাকায় কয়েকটি আঞ্চলিক সংস্থাও রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দেশগুলো ভারত মহাসাগরের সঙ্গে আবদ্ধ। ভারত মহাসাগরের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য নীতি গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আইওআরএর ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদদের ফোরামগুলোর সুপারিশ বিবেচনা করে ঢাকায় এই সংস্থার শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেল। এটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় এই অঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সুনীল অর্থনীতিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সে জন্য সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ও উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এবং সবার কল্যাণ নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। সুনীল অর্থনীতিকে সামনে রেখে সমুদ্রে অব্যবহৃত ও এর তলদেশে অ-উন্মোচিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এই অঞ্চলে যার যার টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করার যে সুযোগ রয়েছে, সেদিকেও আলোকপাত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার করে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, যাতে এই অঞ্চলে একটি অভিন্ন টেকসই সুনীল অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে ওঠে। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ কথা সত্য যে মানবজাতির অবারিত সম্পদ ও অপার সম্ভাবনার উৎস সাগর ও মহাসাগর। অথচ এর অনেকাংশই এখনো অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এবং তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই সাগর-মহাসাগর দিয়েই হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশ সরকার সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের মতো একটি ফোরামের সাহায্য পেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক কূটনীতির জের ধরে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়বে।