কাজিরবাজার ডেস্ক :
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশীট রবিবার দাখিল করলেও সোমবার সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করে নথিভুক্ত করেছেন। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে দায়েরকৃত আপীলে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানিতে নো অর্ডার দিয়েছেন আপীল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ফলে মিন্নির জামিন আদেশ বহাল রয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অভিযোগপত্রটি দাখিল করার জন্য আদালতের জিআরও এমএ হান্নানকে দিয়েছিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির। বিচারক না থাকায় প্রতিবেদনটি গতকাল দাখিল করা না গেলেও সোমবার সকালে বিচারককে দেয়া হয়েছে।
এদিকে রবিবার বিকেল ৫টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, ২৪ জনের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০২/৩৪/২১২/ ১০৯/১১৪/১২০-বি(১) ধারায় চার্জশীট দেয়া হয়েছে। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চার্জশীটে উল্লেখিত আসামিদের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হয়নি পুলিশ।
রিফাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু জানান, এ মামলায় মোট দুটি ভাগে ২৪ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১০ জনকে জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে ও বাকি ১৪ জনকে কিশোর আদালতে বিচারের জন্য আলাদা করা হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারের জন্য করা ১০ আসামির মধ্যে রিফাত ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে। বরগুনা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে রিফাত ২নং আসামি ছিলেন। মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে করা হয়েছে ৭নং আসামি। কিশোর আদালতে বিচারের জন্য রিশান ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যায় চার্জশীটভুক্ত আসামিরা হচ্ছে- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মোঃ হাসান (১৯), মোঃ মুসা (২২), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মোঃ সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)। শিশু অপরাধী হিসেবে চার্জশীটভুক্ত আসামিরা হচ্ছে- রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), ওলিউল্লাহ ওরফে অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), মোঃ নাইম (১৭), তানভীর হোসেন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল শিকদার জয় (১৬) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)।
২৬ জুন বরগুনা সরকারী কলেজ গেটের সামনে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে যখম করা হয়। ওইদিনই বিকেল সাড়ে তিনটায় বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। পরেরদিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছে, সাব্বির আহম্মেদ নয়ন, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন, মুসা, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান, হাসান, রিফাত, অলি ও টিকটক হৃদয়। এজাহারে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। কিন্তু মিন্নির শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকা-ে মিন্নি জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটির তদন্তে নাটকীয় মোড় নেয়। পরে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। মিন্নি ছাড়াও এ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিরা হচ্ছে- রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন সরকার, রাব্বি আকন, হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, তানভীর, নাজমুল হাসান ও রাতুল সিকদার। গ্রেফতারকৃত ১৫ জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। অভিযোগভুক্ত আসামিদের মধ্যে ৯ জন পলাতক রয়েছে। তারা হচ্ছে- মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মোঃ মুসা, রাকিবুল হাসান রিফাত, রায়হান, মোঃ নাঈম, নিয়ামত, মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক ও প্রিন্স মোল্লা।
২৯ আগষ্টহাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেছেন। মিন্নিকে দেয়া জামিনের ৭ পৃষ্ঠার রায় রবিবার প্রকাশিত হয়। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আপীল করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। এডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুফিয়া খাতুন এ আপীল দায়ের করেন। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানিতে নো অর্ডার দিয়েছেন আপীল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ফলে মিন্নির জামিন আদেশ বহাল রয়েছে।
