নেপথ্যে একাধিক এনজিও ॥ রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে

43

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সর্বশেষ গত ২২ আগষ্টসহ দু’দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার পর সরকার ও বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্নের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাখাইন রাজ্যে চরম বর্বরতার শিকার হয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আপামর জনগণ যে মানবিক আচরণ প্রদর্শন করেছে তা যে কোন সময় বুমেরাং হতে পারে কী-না। গত রবিবারে বিশাল শোডাউন এবং উত্থাপিত নানা দাবি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠছে, রোহিঙ্গাদের আস্ফালনের নেপথ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কারা জড়িত। এসব নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীকে এখনই চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরী। নচেত আগামী দিনগুলোতে গোটা কক্সবাজার অঞ্চল এসব আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে চরম অস্থিতিশীলতায় ডুবতে পারে।
গত দু’বছরে রোহিঙ্গাদের পক্ষে নিজ দেশে অর্থাৎ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাস্তবিক অর্থে কোন আন্তরিকতা প্রকাশ পায়নি। একেবারে যারা সাধারণ অসহায় এবং যাদের বাড়ি-ঘর এখনও অক্ষত রয়েছে তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার কাছে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আশ্রয় ক্যাম্পে সংশ্লিষ্ট কিছু এনজিও কর্মীও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে তারা কখনও মুখ খুলতে পারেননি।
বর্তমানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সংঘটিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করেছে। এখন মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে উল্টো শর্ত দেয়া হচ্ছে। আগে মিয়ানমার পক্ষ প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে কিছু শর্ত দিয়ে রাখলেও ইতোমধ্যে তারা ফিরিয়ে নিতে সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে। প্রথম দফায় এমন কিছু তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। যার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৪০। অথচ রোহিঙ্গাদের পক্ষে এখন পাল্টা শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করতে চায়। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তার জন্য তারা জাতিসংঘ বাহিনীর মোতায়েন চায়। এছাড়া তাদের নাগরিকত্ব, চলাচলের স্বাধীনতা এবং যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ও কারাগারে রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। এসব শর্ত বাংলাদেশে আশ্রয় থেকে এরা মিয়ানমার সরকারকে দিচ্ছে। স্বাধীনভাবে আশ্রয়ে থেকে দেশী বিদেশী ত্রাণে এরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তারা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, এ যেন ‘মামার বাড়ির আবদার’।
উখিয়া- টেকনাফে স্থানীয় জনসংখ্যার চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আড়াই গুণেরও বেশি। ফলশ্রুতিতে এরা স্থানীয়দের থোড়াইও কেয়ার করে না। এ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে এ পর্যন্ত ছয় বাংলাদেশী খুন হয়েছেন। হ্নীলা, কুতুপালং ও খুনিয়াপালংয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এদেশীয়দের হত্যা করেছে নানা অজুহাতে। এদের হাতে সর্বশেষ হত্যার শিকার হয়েছে টেকনাফের জাদিমুরা যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক। শুধু তাই নয়, এ যুবলীগ নেতাকে হত্যার পর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তার ছোট ভাইকেও অপহরণ করতে চেয়েছিল। এছাড়া নিজেদের অন্তর্কোন্দলে ৩০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। অপরদিকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছ ৩২ রোহিঙ্গা।
এদেশে আশ্রিত হওয়ার পর নতুন জন্ম নেয়া লক্ষাধিক শিশুসহ উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন ১৩ লাখেরও বেশি। গত প্রায় দুই বছরে রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে শুধু সংগঠিত নয়, বলা চলে সুসংগঠিত। এদের জন্য অর্থ আসছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। নতুন নতুন নামে রোহিঙ্গা সংগঠনের সদস্যরা অস্ত্র সাজে সজ্জিত। আর স্বার্থান্বেষী কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসিত না হওয়ার জন্য নিয়মিত ইন্ধন যোগাচ্ছে। যা উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে সৃষ্ট বিপর্যয়কে আরও ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে বেপরোয়া এসব রোহিঙ্গারা দেশী-বিদেশী ত্রাণে প্রাণে বেঁচে থেকে নিয়মিত শক্তি সঞ্চার করছে। পাশাপাশি তাদের কর্মকা- এদেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত ২২ আগষ্টের উখিয়ার কুতুপালংয়ে লাখো রোহিঙ্গার শোডাউন ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে এরা কী পরিমাণ সুসংগঠিত।
এদিকে, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের একটি ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা কোন অসৎ উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপকর্মে জড়িত। প্রকাশ্যে দা, ছুরি, কিরিচ আর গোপনে অবৈধ অস্ত্রে সজ্জিত হচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। উখিয়া- টেকনাফে ৩২ আশ্রয় শিবিরে সন্ত্রাসীদের উন্মত্ত পদচারণা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর এদেশের সরকারের মানবিকতায় আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা পেয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা তরতাজা হয়েছে। আশ্রয় ও বেঁচে থাকার রসদপত্রের জন্য এদের কোন চিন্তা নেই। উল্টো উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণের জিনিসপত্র ক্রয় করে স্থানীয়রা দিনযাপন করছেন। উখিয়া-টেকনাফে বাজারগুলোতে মিয়ানমারে তৈরি বিভিন্ন পণ্য আধিক্য রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে অবৈধপথে মিয়ানমারের পণ্য সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসছে। এসব পণ্য অপেক্ষাকৃত বাংলাদেশের পণ্যের চেয়ে কম দামের হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে আছে। টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদার আশ্রয় শিবির সংশ্লিষ্ট এলাকায় রোহিঙ্গারা গড়ে তুলেছে দুটি বাজার। একটির নাম মংডু বাজার ও অপরটির নাম বলি বাজার। এ দুটি নাম রাখাইন রাজ্যে দুটি প্রসিদ্ধ বাজারের। এছাড়া উখিয়ার কুতুপালং অভ্যন্তরে বলি বাজার নামে আরও একটি বিরাট বাজার সৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফ উখিয়ার এসব বাজারে বিক্রেতারা যেমন রোহিঙ্গা, তেমনি অধিকাংশ ক্রেতাও রোহিঙ্গা। এসব বাজারকে বর্মাইয়্যা বাজার নামে বলা হয়ে থাকে।
গ্রোতের মতো অর্থ ব্যয় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য : মানবিকতার কারণে আশ্রয় দেয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পেছনে বাংলাদেশ সরকার গ্রোতের মতো অর্থ ব্যয় করে চলেছে। নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে রাতের পর থেকে আসা এবং আরও আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য গত ২ বছরে সরকারের খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ তথ্য দিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। নতুন পুরনো এবং এদেশে জন্ম নেয়া শিশুসহ বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লক্ষাধিক। সরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের যে তালিকা করা হয়েছে সে সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি। এরা মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত।
বিদেশী সাহায্য ও অনুদান হ্রাস : লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে আসার পর বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ পড়ে গেলে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি। এছাড়া যেসব এনজিও রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক কাজ করছে এদের পক্ষ থেকেও ত্রাণ প্রদানের সহায়তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে এদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ত্রাণ সহায়তার বিষয়টি সঙ্কটে পড়বে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কাছে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ত্রাণ যাচ্ছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা অতিরিক্ত ত্রাণ খোলাবাজারে বিক্রি করছে। স্থানীয়রা এসব ত্রাণ কিনছে। এছাড়া ত্রাণের কিছু অংশ কক্সবাজার ছাড়িয়ে চট্টগ্রামে আসার ঘটনাও রয়েছে।
দেশীয় বিপুল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা : উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরিকৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজেদের শক্তি সঞ্চার করার অংশ হিসেবে এ ধরনের অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আশ্রিত হওয়া সত্ত্বেও শরণার্থী আইন উপেক্ষা করে এরা সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, ব্যানার, ফেষ্টুন-প্ল্যাকার্ড ও লিফলেট বিতরণ করছে দুর্দান্ত সাহসে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৬’শ পিস দেশীয় অস্ত্র।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশের পূর্বে গোপনে এসব অস্ত্র সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেনি কামাররা। বর্তমানে প্রায় প্রতি রোহিঙ্গার হাতে দেশীয় অস্ত্র যেমন থাকে সন্ত্রাসীদের হাতে ভারি অস্ত্রও থাকছে। অভিযোগ উঠেছে, দা, ছুরি, কিরিচ ইত্যাদি জাতীয় দেশীয় অস্ত্র জোগান দিয়েছে ‘মুক্তি’ নামের একটি এনজিও সংস্থা। পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও) ইতিপূর্বে প্রতিটি ক্যাম্পে ভয়ঙ্কর কিরিচ ও দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক পৌঁছায় বলেও তথ্য রয়েছে। মুক্তি, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ। প্রত্যাবাসন স্থগিত করতে অর্ধ শতাধিক এনজিও এবং দেশে ঘাপটি মেরে থাকা ও আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করা দুই শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আশ্রিতদের ফিরে না যাওয়ার জন্য সর্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। প্রয়োজনে এদেশের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর লক্ষ্যে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝেও দেশীয় অস্ত্র পৌঁছানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ লক্ষ্যেই উখিয়া- টেকনাফের কামারের দোকানগুলোতে ভিন্ন সাইজের হাজার হাজার পিস দা, ছুরি, চাপাতি, কিরিচ তৈরি করা হচ্ছে। এসব অস্ত্র কেউ তৈরি করছে প্রকাশ্যে আর কেউ বা গোপনে। উদ্দেশ্য একটাই। তা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মাঝে এসব সরবরাহ করা। এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর উখিয়া- টেকনাফ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বাড়তি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় উখিয়ার কোটবাজারের ভালুকিয়া রোডে সুধীর কর্মকারের দোকানে এ ধরনের দেশীয় অস্ত্রের আলামত পাওয়া গেলে উখিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানে উদ্ধার হয় ৬০০ পিস দা, কিরিচ, চাপাতি ও ছুরি।
দোকান মালিক সুধীর কর্মকার উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ঈদ-উল- আজহার আগে বেসরকারী এনজিও সংস্থা ‘মুক্তি’র জন্য ২ হাজার ৬০০ পিস দেশীয় এসব দা, ছুরি, চাপাতি, কিরিচ তৈরির অর্ডার দেয় ভালুকিয়ার বাসিন্দা সাইফুল নামের একজন। অর্ডার দেয়ার সময় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন সাইফুল। আর অস্ত্রসমূহ আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি দিতে বলা হয়। এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোমবার এ ঘটনার খবর পেয়ে অস্ত্রগুলো উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। এনজিও সংস্থা ‘মুক্তি’র জন্য ভালুকিয়ার জনৈক সাইফুল এসব অস্ত্র তৈরির অর্ডার যে দিয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হতে টেকনাফগামী মহাসড়কে চলাচল করা প্রত্যেক প্রকারের গাড়ি, নৌ-যান, মালামাল, ফেরিওয়ালা, বক্স, কালো গ্লাসযুক্ত এনজিওগুলোর ব্যবহার করা প্রাইভেট গাড়ি এবং ব্যক্তিকে চেক করার জন্য প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণের জন্য দেশীয় অস্ত্র তৈরির ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে মুক্তির কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রনজিত দাশ বলেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোন আলাপ আলোচনা করা হয়নি। টেন্ডার করা হয়েছে কি না? তাও তিনি জানেন না। মুক্তির কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রনজিত দাশ সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্তির কোন ধরনের দায়িত্ব আমার কাঁধে নেই। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার কাজ শুধু চেক-এ কাউন্টার সই ও মিটিংয়ের চিঠিতে সই করা।
জানা গেছে, টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্য ৬ হাজার দেশীয় অস্ত্র সরবরাহের করতে চাচ্ছিল ‘মুক্তি’ এনজিও। সংস্থাটির সভাপতি শিবুলাল ভারত ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলদীঘির পশ্চিমপাড় এলাকার হরিদাস দেবদাসের পুত্র শিবু লাল দেবদাস (৬১) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে প্রণীত ভারতের (৫২৫) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-২৪ পরগনা জেলার বারাসাত (সদর) মহকুমার মধ্যগ্রাম থানা ও পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবু নগর এলাকার (৭০০১২৯) ভোটার। তার ভোটার নম্বর ২২৪ ওয়াইসিডব্লিউ ১৫০৩৩১৭, বাড়ি নম্বর-এন০২৬৬। একইভাবে তার স্ত্রী সীমা দেবদাস (৫১) এবং ছেলে অমর্ত্য দেবদাসও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। স্ত্রীর ভোটার নম্বর-২২৫ ভিএইচএম ১৭৪৯৪৪৯, বাড়ি নম্বর-এন ০২৭৬ আর ছেলের ভোটার নম্বর-২২৩ ওয়াইসিডব্লিউ ১৯৬৪৯৭২, বাড়ি নম্বর-এন ০৩৬১। আবার শিবু লালের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর-১৯৫৮২২২২৪০৯৩৬৭৮৮৮। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোটার লিষ্টে ৩৬৭৮৮৮ নম্বর ফরম মূলে তার নাম রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার গোলদীঘির পশ্চিমপার (১৩৭৭) এলাকার ১১৭ সিরিয়ালের ভোটার নম্বর-২২১৩৭৭৩৬৭৮৮। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে আরএসও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সঙ্গে মুক্তির গোপন বৈঠককালীন এনজিওটির এ্যাকাউন্টেন্ট অলক শর্মাসহ ১৮জনকে আটক করেছিল পুলিশ। তারা নাশকতা সৃষ্টির জন্য শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নিয়ে গোপন বৈঠক করছিল। ওইসময় মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল ও প্রথম সারির আরএসও জঙ্গিদের ব্যাপক তদ্বির ও পুলিশের দুর্বল রিপোর্টে কারাগার থেকে বেরিয়ে পড়ে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। এখানে উল্লেখ্য, মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সঙ্গে গোপন আঁতাত ঠিক রাখতে এবং বিদেশী ফান্ড আনার কাজে সহজ হওয়ার জন্য কৌশলে এক সময়ের দুর্র্ধষ শিবির ক্যাডার আবদুস ছামাদকে মুক্তির সেকেন্ড ইন কমান্ড (ফাইন্যান্স কর্মকর্তা) হিসেবে নিয়োজিত রেখেছে বলে জানা গেছে। ওই আবদুস ছামাদ যুদ্ধাপরাধী (মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া) মীর কাশেম আলীর পরিচালনাধীন রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন আরএসওর প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশী ফান্ড আনছে। বলাবাহুল্য, গতবছর ৪১টি এনজিওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো রিপোর্টে মুক্তি নামের এনজিওটি ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা অস্ত্র তৈরি করিনা দাবি করে এনজিও মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, কামারের দোকানে উদ্ধার হওয়া এসব লোহা টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য বাগান তৈরির কাজে সহায়ক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল।
এদিকে ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রত্যাবাসনবিরোধী নানা অভিযোগের পাহাড়। এই রোহিঙ্গা নেতা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তিনি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন, কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করলেন এর কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। ২২ আগষ্টের রোহিঙ্গা সমাবেশে তিনি ইংরেজী ও রোহিঙ্গা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন।