বিপুল আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের সঞ্চয় হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা আগেও বহুবার ঘটেছে। নতুন করে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে প্রতারকরা। রাইড শেয়ার কম্পানি গড়ে তোলার কথা বলে ৪০ পরিবারকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীসেবা নামের একটি রাইড শেয়ার কম্পানি গড়ে তোলার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো কোনো পরিবার তাদের সঞ্চয়ের সব টাকা তুলে দিয়েছিল প্রতারকের হাতে। কেউ কেউ তাদের উপার্জনের অবলম্বন বিক্রি করে টাকা লগ্নি করেছিল। কথা ছিল একটি রাইড শেয়ার কম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিনিয়োগকারী সবাই এই রাইড শেয়ারিং কম্পানির ব্যাবসায়িক অংশীদার হবে—এমনই কথা ছিল। কিন্তু গত দুই বছরেও কম্পানি কোনো মোটরবাইক রাস্তায় নামাতে পারেনি, বরং পথে বসিয়ে দিয়েছে ৪০টি পরিবার বা বিনিয়োগকারীকে।
রাইড শেয়ারিং এখন রাজধানী ঢাকায় খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। বিকল্প পরিবহনব্যবস্থা হিসেবে গণপরিবহনের পাশাপাশি রাইড শেয়ারিংয়ের জনপ্রিয়তায় স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া রাজধানীর রামপুরার মতো জায়গায় অফিস, স্ট্যাম্পে সই-স্বাক্ষর করে চুক্তিনামার কারণে সবাই আকৃষ্ট হয়েছিল—এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পেরেছে। কেউ কি খোঁজ নিয়েছিল যে এই প্রতিষ্ঠান অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়েছে কি না। আমরা জানি, রাইড শেয়ারিং হচ্ছে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যক্তিমালিকানাধীন মোটরযানের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন সেবা। উবার, পাঠাওয়ের মতো অ্যাপসভিত্তিক এই পরিবহনের ভাড়ার একটি অংশ প্রতিষ্ঠান পায়। কিন্তু ‘যাত্রীসেবা’ কোনো রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ব্যবসা খুলে মানুষের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান টাকা বিনিয়োগ করতে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করে। এ বিষয়ে থানায়ও জিডি হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে। এমনকি যাত্রীসেবা রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দাবিদার ব্যক্তিটিও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত কিভাবে ও কবে দেবেন, তা বলেননি।
এখন যাত্রীসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিককে ধরে টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে কোনো প্রতারককে আইনের বাইরে রাখা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর পাশাপাশি বিনিয়োগ করার আগে আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে। কোথায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে, বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। আমরা আশা করব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।