বেশ কিছুদিন থেকেই দেশের আলুর বাজার অস্থির। এই অস্থিরতা নিরসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, মুনাফালোভী একটি চক্র আলু মজুত করে দাম বৃদ্ধি করছে। এখানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোনো দায় নেই। তবে কারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়াচ্ছে, সরকার চাইলে আমরা সেসব তথ্য দেব। আমরা মনে করি, মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে যারা আলু সংরক্ষণ করেছে, তারা মনে করছে, আলুর মজুত কম রয়েছে। সেজন্য তারা আলুর দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। যারা অতি মুনাফা লাভের জন্য আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম এখন ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা। নতুন মৌসুম আসতে এখনো অনেক বাকি। এরই মধ্যে আলুর দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। দেশে চাহিদার চেয়ে ২০ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হলেও হিমাগার ও মজুতদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে অসাধু চক্রের কারসাজিতে খুচরা নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য বাজারে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পণ্যটি কিনতে বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এসব বিষয় উলেস্নখ করে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরকারি তদারকি সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জুন থেকে অস্থির আলুর বাজার। এই অস্থিরতা দূর করতে হবে। কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টার কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্তে¡ও গত দুই মাস ধরে আলু দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।
ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো, ‘ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।’ খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। এছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এই ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে।
খুচরা বাজারে যখন ৫০ টাকার নিচে আলু পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমরা হতাশ হই। অথচ কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। দেশে আলুর সংকট নেই। উল্টো আলু বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সুতরাং, আলুর দাম কমাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।