জনশক্তি রপ্তানি বৈদেশিক কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ করছে। এসব প্রবাসী শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য যায় তরুণ-যুবক বা মধ্যবয়সী প্রচুর বাংলাদেশি। যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনার আশায় ধারদেনা করে তিন-চার লাখ টাকা দিয়ে লোকজন পাড়ি জমাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে যাওয়াটুকুই সার। কারণ সেখানে গিয়ে তাদের দাসের জীবনযাপন করতে হয়; ‘বন্দি জীবন’ কাটাতে হয়। আবার অনেকে বৈধভাবে গিয়ে পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়ছে। তাদের জীবন আরো কঠিন। বিদেশ যাওয়ার অন্যান্য রুটে, সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অবৈধভাবে পাড়ি জমাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখেও পড়তে হয়। ফলে অনেক কর্মপ্রত্যাশী মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
অনেকে দালাল কোম্পানি ধরে যে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় গেছে তাদের প্রায় সবাই ‘ক্রীতদাসত্ব’ বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের নেওয়া হচ্ছে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির ব্যবস্থা হয় না। হয়তো কোনো ঠিকা কাজে নিয়োগ করা হয়। পাসপোর্ট-ভিসা করে নেওয়া হলেও এয়ারপোর্টে গিয়ে সেসব জব্দ করে দালালচক্র। প্রতিশ্রুত কারখানায় চাকরি জোটে না। তাদের আটকে রাখা হয় দালালের প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেই কর্মস্থলে আনা-নেওয়া করা হয়, বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই। বেতন বা মজুরি যা হওয়ার কথা তার অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হয়; আবার বিভিন্ন ‘বিল’ কেটে রাখা হয়। বাকি টাকায় অনেকের ‘দালালের পাওনা’ পরিশোধ করাই অসম্ভব। ফলে নিগ্রহের জীবন থেকে মুক্তিও মেলে না। অবৈধ পথে যারা যায় তাদের ‘আটক থাকা’র কপালও হয় না। দিনে লুকিয়ে থেকে কাজ করে রাতে বনে-জঙ্গলে কাটাতে হয়। অনেকের ‘স্বপ্নের দিন’ কাটছে জেলে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের নামে আসলে ‘দাস ব্যবসা’ চলছে। ক্রীতদাসের মতো আটকে রাখা হয় প্রচুর শ্রমিককে। পরে একেকজনকে একেক কারখানায় ‘বিক্রি’ করে বা ‘ভাড়া’ দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করানো হয়। বাংলাদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যবস্থার অপব্যবহার করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
বিদেশে কর্মসংস্থান ব্যক্তির জন্য যেমন জরুরি তেমনি দেশের প্রবাস-আয় বৃদ্ধির জন্যও দরকার। এ আয় রাষ্ট্রের উন্নয়নের কাজেই লাগছে। তাহলে বৈধ উপায়েই যারা বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যাচ্ছে তাদের এমন দাস জীবন কেন? সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কি প্রতারকচক্র সম্পর্কে সতর্ক নয়! সত্বর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।