বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে লকডাউন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ফ্রান্স। দেশটিতে ইতোমধ্যে খুলেছে দোকান, কারখানা ও কিছু স্কুল। তবে দ্বিতীয়বার যেন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়, এ নিয়ে সতর্ক রয়েছে দেশটি। সোমবার কিছু অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করেছে ফ্রান্স। সোমবার থেকে তুরস্কও লকডাউন শিথিল করেছে। দোকান-পাট, শপিংমল ও সেলুন খুলেছে। প্রায় দুমাস ধরে সেখানে সবকিছু বন্ধ ছিল। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর কোরিয়া সীমান্তবর্তী চীনের সুলান শহর লকডাউন করা হয়েছে। সৌদিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া ভারতে ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিশ্বে করোনা আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে উঠে গেছে রাশিয়া।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪২ লাখ এক হাজার ৭৮১ জন হয়েছে। মারা গেছেন দুই লাখ ৮৪ হাজার ২০৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ দুই হাজার ৭৩২ জন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৩ জন। স্পেনে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৩, রাশিয়ায় দুই লাখ ২১ হাজার ৩৪৪, ব্রিটেনে দুই লাখ ১৯ হাজার ১৮৩, ইতালিতে দুই লাখ ১৯ হাজার ৭০, ফ্রান্সে এক লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০, জার্মানিতে এক লাখ ৭১ হাজার ৮৭৯, ব্রাজিলে এক লাখ ৬৩ হাজার ৪২৭, তুরস্কে এক লাখ ৩৮ হাজার ৬৫৭, ইরান এক লাখ নয় হাজার ২৮৭ জন।
মারা যাওয়াদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ হাজার ৭৮৭, ব্রিটেনে ৩১ হাজার ৮৫৫, ইতালিতে ৩০ হাজার ৫৬০, স্পেনে ২৬ হাজার ৬২১, ফ্রান্সে ২৬ হাজার ৩৮০, ব্রাজিলে ১১ হাজার ১৬৮, বেলজিয়ামে আট হাজার ৭০৭, জার্মানিতে সাত হজার ৫৬৯, ইরানে ছয় হাজার ৬৮৫, কানাডায় চার হাজার ৮৭০ জন হয়েছে।
লকডাউন তুলেছে ফ্রান্স ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পঞ্চম সর্বাধিক মৃত্যুর দেশ ফ্রান্সে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধাপে ধাপে কর্মক্ষেত্রে ফিরেছে ও স্কুল খুলেছে। ছয় কোটি ৭০ লাখ মানুষ এখন সরকারের অনুমতি ছাড়াই বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন। সোমবার সকালে প্যারিসে যানবাহনের চলাচল বাড়ে। দোকান জন্য কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। রাজধানীর মেট্রোলাইনে ভিড় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। যাত্রীদের মাস্ক পরে থাকতে হয়েছে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চিহ্ন এঁকে দেয়া নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়েছে। করোনার মহামারী প্রতিরোধে আট সপ্তাহ লকডাউনে ছিল ফ্রান্স। খাবার ও ওষুধের মতো জরুরী প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া সব বন্ধ ছিল। এপ্রিল মাসে সংক্রমণ এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে (ইউসিইউ) থাকা রোগীর সংখ্যা কমতে থাকায় লকডাউন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পেশাগত কাজ, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান ও রোগীর সেবাদানকারীরা ছাড়া অন্যক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক শ’ কিলোমিটার বা ৬২ মাইল দূরে যাতায়াত করতে পারবেন। সংক্রমণ কম এমন অঞ্চলগুলোতে এ সপ্তাহেই খুলেছে কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারী স্কুল। চলতি মাসেই জুনিয়র হাইস্কুলও খুলবে। শ্রেণীকক্ষে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে থাকতে হবে। প্যারিসসহ বেশকিছু অঞ্চল এখনও ‘রেডজোন’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। দেশজুড়ে যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের বাড়ি থেকেই কাজ করতে বলা হয়েছে। চলতি বছরে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি ৮ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন ম্যাক্রোঁ। করোনা মহামারী মোকাবেলায় তার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ‘লে একোস’ সংবাদপত্র পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, মে মাসে ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা কমেছে ৩৪ শতাংশ।
লকডাউন শিথিল তুরস্কে ॥ লকডাউন শিথিল করেছে তুরস্ক। ফলে সোমবার থেকে দেশটির বিভিন্ন শপিংমল, সেলুন ও দোকান-পাট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। করোনার বিস্তাররোধ করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত কয়েকদিনে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকায় লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দেয়া হয়। রবিবার থেকে বয়স্ক লোকজনকে সাত সপ্তাহ পর বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। গত ২১ মার্চ তুরস্কে কার্ফু জারি করা হয়। সে সময় থেকেই ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী লোকজনের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি থাকায় তাদের বাড়িতেই থাকতে বলা হয়েছিল। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৯২ হাজার ৬৯১ জন। করোনার এ্যাক্টিভ কেস ৪২ হাজার ১৮০। যাদের মধ্যে এক হাজার ১৫৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চীনের সুলান শহর লকডাউন ॥ উত্তর কোরিয়া সীমান্তবর্তী চীনের সুলান শহরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সেখানে লকডাউন জারি করা হয়েছে। রবিবার শহরটিতে ১১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই আক্রান্ত এক ধোপানীর কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীর সংস্পর্শে তার স্বামী, বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হন। সম্প্রতি কোথাও ভ্রমণে যাননি বলেও জানান সে নারী। ঘটনার পর সুলানের জনসমাবেশের সব স্থান বন্ধ করে দেয়া হয়। শহরটির অধিবাসীদের বাড়িতেই থাকতে বলা হয়। সেই সঙ্গে গণপরিবহন স্থগিত করে শহরটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার চীনে ১৭ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে টানা দু’দিন দুই অঙ্কেও রোগী মিলল। তাদের মধ্যে পাঁচজন করোনাভাইরাসের উৎসস্থল উহান শহরের, যেখানে রোগীসংখ্যা শূন্যে নেমে যাওয়ায় লকডাউন তুলে দেয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও ৭৪৭ মৃত্যু ॥ করোনার মরণ ছোবলে শোচনীয় অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে ব্যাপক আকারে যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, সে সময়ই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক লাখেরও বেশি মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সেই ভয়াবহতার দিকেই ক্রমশ এগিয়ে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটি। এরই মাঝে সেখানে করোনায় মৃত্যু ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৪৭ মৃত্যু। এর বাইরে গুরুতর অবস্থায় আছেন প্রায় ১৭ হাজার রোগী। বিশাল সংখ্যক করোনা রোগীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সেরে উঠেছেন মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার।
সৌদিতে মৃত বেড়ে ২৪৬ ॥ সৗদি আরবে মহামারী করোনায় মৃতের সংখ্য বেড়ে ২৪৬ হয়েছে। আরও অন্তত ৩৯ হাজার ৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৯১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও ৭ জনের। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩১৩ জন। আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে মক্কা মুকাররমায় সর্বোচ্চ ৪৩৮ জন শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বন্দর নগরী জেদ্দায় ৩৭৪, রাজধানী রিয়াদে ৩৬৩, মদিনা মুনাওয়ারায় ২৪৮, দাম্মামে ১০৪, হুফুপে ৭২, ক্বনফুদায় ৫২, হাদ্দায় ৪০, জুবাইলে ৩০ ও তাইপে ২৮ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে।
ভারতে আরও ৯৭ মৃত্যু ॥ ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও চার হাজার ২১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৯৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ১৬২ জন। মৃত বেড়ে দুই হাজার ২১২ জন হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২০ হাজার ৯৬৯ জন। করোনার এ্যাক্টিভ কেস ৪৩ হাজার ৯৮০। সোমবার পর্যন্ত ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র। সেখানে নতুন করে আরও এক হাজার ২৭৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২২ হাজার।
রাশিয়ায় আরও ৯৪ মৃত্যু ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় ১১ হাজার ৬৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর ৯৪ জন করোনায় সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারান। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস জানায়, দেশটিতে করোনা থেকে মুক্ত হয়ে ৩৯ হাজার ৮০১ জন বাড়ি ফিরে গেছেন। রাশিয়ায় ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৩ জনের টেস্ট করা হয়েছে। করেনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনসহ দুই সপ্তাহের মধ্যে চার শীর্ষ রুশ কর্মকর্তা হাসপাতালে ভর্তি হন।