বৈরী আবহাওয়ায় তাহিরপুরে ২৮ ধানে ফলন ব্যাহত হওয়ার আশংকা

16
তাহিরপুরে মাটিয়ান হাওর কৃষক সত্য রায় এর জমি। ব্রি-২৮ ধান। গাছে শুধু পাতা।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
“এইবার আটাইশ মাইর দিসে, আমরার আওরো যারা আটাইশ করছে তারা কইতাছে লাকাই না অইলে গছি ধান লাগাইলে অত ক্ষতি অইতো না, কয়ডা ধান পাওয়া যাইতো।” তাহিরপুর উপজেলার দুটি বড় বোরো ফসলি হাওরের মধ্যে একটি মাটিয়ান। হাওরের পূর্ব পাশ ধরে রতনশ্রী গ্রাম থেকে বড়দল হয়ে একটি সাবমারসেবল সড়ক গিয়েছে কাউকান্দি পর্যন্ত। সে সড়ক পথ ধরে বাইকে যেতে যেতে কাউকান্দি গ্রামের সামনে দেখা গ্রামেরই কৃষক আব্দুর রহমান এর সাথে।
গ্রামের সামনেই মাটিয়ান হাওরের বোরো ফসলের এ অবস্থা দেখে জানতে চাইলে এলাকার ভাষায় তিনি উপরোক্ত কথা গুলো বলেন। তার মতে এবার আবহাওয়া বৈরী থাকার কারণে ব্রি ২৮ জাতের ধানের ফলন ভালো হয়নি। তার চাইতে যদি দেশী জাতের কোন ধান লাগাতেন তা হলে সামান্য ধান হলেও পেতেন।
শুধু আব্দুর রহমান নয়। মাটিয়ান হাওর পার রতনশ্রী, বড়দল, কাউকান্দি, কামাড়কান্দি. গোলকপুর সহ একাধিক গ্রামের কৃষকেরই ব্রি ২৮ ধানের ফলন বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বলছেন মাস দেড়েক আগে ( ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে) হঠাৎ করে হাওরে রোপণকৃত জমির ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। হলুদ হওয়ার পর অনেক কৃষক জমিতে সালফার ও ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন। তার পাশাপাশি সে সময় সামন্য বৃষ্টি হলে জমিতে রোপণকৃত ধানের হলুদ বর্ণ ধীরে ধীরে কেটে যায়। আবার ধান গাছরে পাতা সবুজ বর্ণ ধারণ করে।
সম্প্রতি বোরো ফসলি জমিতে দেখা দেয় আর এক সমস্যা। ফেব্রুয়ারি মাসে সে সমস্ত জমির ধান হলুদ হয়েছিলো তার মধ্যে ব্রি ২৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার পথে।
অনেক জমিতে দেখা যায় ধান গাছ আছে ঠিকই কিন্তু ধান নেই, শুধু পাতা পড়ে আছে। অনেক জমিতে ধানের শীষ বের হলেও শীষে পুষ্টি নেই। যা বের হচ্ছে তার অধিকাংশই চিঠা।
কৃষকরা জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ধানের হলুদ বর্ণ দেখে দেখে অনকে কৃষক জমিতে প্রচুর পরিমাণে সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। কিন্তু তারপরও কৃষক তেমন সুবিধা পাচ্ছেন না। বরং অতিরিক্ত ইউরিয়া দেয়ার কারণে জমিতে ঘাস জন্মাচ্ছে প্রচুর। এমনটাই জানালেন, মধ্য তাহিরপুর খলাহাটি গ্রামের কৃষক সত্য রায়। তিনি জানান, মাটিয়ান হাওরে তারাজান বিলের পশ্চিম পাশে তিনি ৩ কেয়ার (৯০) শতক জমিতে ব্রি ২৮ ধান রোপণ করেন। মাস দেড়েক পূর্বে হঠাৎ তার ধান হলুদ হয়ে যায়। সে সময় তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে সালফার সহ বিভন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেন। সেই সাথে একাধিকবার তিনি বিল থেকে জমিতে সেচ দেন। কিন্তু সেচ দেয়ার পরও জমিতে আশানুরূপ ফলন দেখতে পান না তিনি।
একই অবস্থার কথা জানালেন হাওরের অপর এক কৃষক জামালগড় গ্রামের মাহমুদ আলী। তিনি জানান. হাওরের সাবমারসেবল সড়কের পশ্চিম পাশে ৪ কেয়ার (১২০ শতক) জমিতে ব্রি ২৮ ধান রোপণ করেন। তার জমিরও একই অবস্থা। ধান গাছে শুধু পাতা। ধান নেই, সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে ঘাস জন্মাচ্ছে জমিতে। তাই তিনি এখন ধান গাছ কেটে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে মাটিয়ান হাওরে ব্রি ২৮ ধানে সমস্যা হলেও ব্রি ২৯ ধানে এখনো কোন সমস্যা দেখা যায় নি বা এ সংক্রান্ত্র কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি হাওর পারের কৃষকদের কাছ থেকে।
মাটিয়ান হাওরপার বড়দল গ্রামের কৃষক ফয়সল আহমেদ বলেন, অনেক কৃষক নিয়মিত জমিতে সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়েছেন। তাদের জমিও একই অবস্থা। তিনি মনে করেন নিম্ন মানের বীজের কারণেও ২৮ ধানের ফলনে এ সমস্যা হতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, মাটিয়ান হাওরের পূর্ব পাশে ব্রি ২৮ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ রকম খবর কৃষকরা তাকে জানিয়েছেন। তারপর তিনি সরজমিন হাওরে গিয়েছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন খরার কারণে ব্রি ২৮ ধানের ফলন কিছুটা কম হতে পারে। সময় মত সেচ দিলে সমস্যা তেমন হতো না বলেও তিনি জানান।