১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর জীবনাবসান ঘটেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। ৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তের ক্যান্সার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ শিল্পীর তুলিতে ‘বিশ্ব বেহায়া’ হিসেবে চিহ্নিত। আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারী কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’সহ নানা আলোচনা তাঁকে নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৫২ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে। ১৯৭৩ সালে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন তিনি, স্থগিত করেন সংবিধান। প্রথমে বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদে বসালেও এক বছর পর নিজেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন তিনি। তাঁর এই ক্ষমতারোহণ অবৈধ বলে ঘোষণা করেন আদালত। ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তাঁর রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’। উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তিনি। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয়। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরো নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত। ১৯৯০ সালে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাঁকে। ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দি হন তখন। তাঁর বিরুদ্ধে হয় অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে বিজয়ী হন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে এরশাদ একটি অবস্থান পেয়ে যান। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতার আসনে বসেন তিনি।
বাংলাদেশে ‘স্বৈরাচার’ তকমাটি শুধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামের সঙ্গেই এঁটে আছে। গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্কের মধ্যে তিনি টিকে ছিলেন রাজনীতিতে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটল।