আয়শা সাথী

15

সহস্র সখিনার আত্ম কাহন :

জ্ঞানীর শহরে পতিতা ধুকছে
অসুখ গেড়েছে বেশ,
ঘৃন্য পতিতা শুশ্রূষা পাবেনা-
এটাই জ্ঞানীর আদেশ।
সখিনা রোষে গলাবাজি হাঁকে
দোষে যত মান্যবর,
“যৌবনে তো খাসা মাল ছিলেম
বার্ধক্যেই কমিলো দর?”
নিরুপায় বাবু থানা পুলিশ ডাকে
বাপ-ভাই-স্বামী ঘর,
সকলে আসিয়া বেমালুম বিমুখ,
পরিচয় দেয় পর।
সখিনা হাসিয়া জিজ্ঞেসে দেবর’রে
আসলেই কি দোষ তার,
পতির সাথেই পরপারে কি সেদিন
যায়নি সুখের ঘর?
বারো বয়সের নাবালক মেয়েটারে
দিয়েছিলো বুড়ো বর,
হাফ ছাড়িয়া যেন বাঁচিয়াছিল চাচা
“অহন পরের ঘরে মর”।
মরে ঠিকই গিয়েছিল জুলেখা
সয়ে শত নিপীড়ন,
লাশখানি দেখাও জোটেনি কপালে
শোননি মোর ক্রন্দন।
ছোট্ট সুলেমান সুল হলো সবের
ভাগীদার যে সে বড়,
বড় হলে যদি জমিজমা পায়
সে যাতনায় জ্বলে মরো।
একদা তাহারে ডাকিলে ক্ষেতে
পান্তা যেন লয়ে যায়,
সেই যে গেল কোলখানি রাখি
আর তো দেখেনি মা’য়।
অবশেষে জ্বালা হলেম আমি
কেন আছি আজো ঘরে,
পরের খেয়ে গোলা বুঝি শেষ
যাইনা কেন মরে?
সারাদিন ক্ষণ আড়চোখে দেখ
লালা ঝরে বুঝি চোখে,
তাতেও নেহাৎ দিল যে বেখুস
কড়া নাড়িলে রাতে।
সেদিন তো আর বেশ্যা হইনি
সম্ভ্রম নিয়ে পালাই,
ভাই যেহেতু আছে আজো বাঁচি
পাব’ই সেথা ঠাঁই।
বড় বিস্ময় সেখানেই ছিলো
এলেম যবে ফিরে,
ভাই মোর পড়িলো মহা বিপাকে
বোঝা বাড়ে তার ঘাড়ে।
দূর্মূল্যের বাজার যে চড়া
নিজেরাই বাঁচা দায়,
উটকো জুটেছে ভাগীদারও বটে
কখন কি যেন চায়!
সারাদিন খাটি তবু ভাবিজানের
মেজাজ থাকে কড়া,
ভাইয়ের উপর আদেশ বসাইলো
করিতে বাড়ি ছাড়া।
নিরুপায় বিধবা যাই মোল্লা বাড়ি
মেলে যদি সেথা ঠাঁয়,
আল্লাওয়ালা দিলদার যে তাহারা
নিবে বুঝি মোর দায়।
মোল্লার বৌ আগা গোড়া দেখে
বয়স মাপিয়া কয়-
“তোমারে দেখিয়া মৌলভীসাব যদি
সুন্নত বাছিয়া লয়?”
ভাবিয়া দেখিলাম নারীমন তাহার
থাকিতেই পারে ভয়,
দীন-কূল ভুলে শেষে রাখিলাম পা
পুরোহিত আলয়।
মশাই কহে “জাত যাবে মোর
দূর হও দূরাচারী,
গঙ্গাজলে সাফ করিতে হইবে
দিলো আরো দু’খানা ঝাড়ি।”
সেদিন কোথাও ঠাঁই মেলেনি
পাইনি এতটুকু আশ্রম,
দিনের আলোয় আজ অশুচি আমি
তোমরা সকলে সাধু-সম্ভ্রম।
রাতের আঁধারে মুখোশ খোল
আমি হই রাতের রাণী,
আজ সেবা দিতে পাইতেছ ভয়
সকলে যায় বুঝি জানি!

একই বিধাতা মানুষ গড়েছে
একই বেদনা সুখ,
পতিতা-সাধু সবারেই দিয়াছে
একই তৃষ্ণা- ভুক।
স্বার্থের কারনে রচো ভিন রীতি
করো ধর্মে ধর্মে ভেদ,
কেমন জ্ঞানী তুমি হে সাধু
করোনা অধর্মের ছেদ?
সবার উপরে করো মানব ধর্ম
নিজেরে যাছো হে পূণ্যবান,
একই প্রতিপালকের বিশ্ব বলয়ে
বাজাও সাম্যের তান।